অলৌকিক বানভাসি

কখনো কখনো আমি কবিতা লিখতে গিয়ে খুব
ভয় পাই, যেন অভিমান ক’রে কবিতা ক্রমশ বহু দূরে
চলে যাবে, মনে হয়। অন্তর্গত পাতালেও ডুব
দিয়ে বারবার, মাটি খুঁড়ে
দশটি আঙুলে
দেখেছি প্রভূত হেনস্তার কালি ছাড়া
জোটে না কিছুই; ভুলে
যাই নিমেষেই সব কলাকৌশল এবং হতচ্ছাড়া
কোণে পড়ে থাকি একা, ডাকি
গলা ছেড়ে, অথচ দেয় না সাড়া কেউ চরাচরে।

মাথার ওপরে পাখি
দু’ একবার ঘুরে চলে যায় উড়ে, পাতার মর্মরে
কবিতা মিলিয়ে যায় স্বপ্নের মতন।
ভয় পেয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ
বিস্ফারিত হয়, জাগরণ
চকিতে ধরায় জ্বালা সত্তাময়; ভুলে-থাকা শোক

পুনরায় ডানার ঝাপট মারে মনে
পড়ে, ইদানীং জলকন্যা বেজায় পচনশীল,
স্বপ্নের মিনারগুলি রাহুগ্রস্ত, কালো আবরণে
ঢাকা পড়ে গেছে প্রবালের সিঁড়ি, রোদ-ধোয়া কোনো শঙ্খচিল
দেয় না চক্কর আজ দরাজ অক্ষরবৃত্তে। লাশ
পড়ে থাকে উপদ্রুত কত
নিঝুম শেয়াল-গর্তে আর পূর্ণিমার দীর্ঘশ্বাস
বয় অবিরত,
বেগানা দূরের মেঘমালা, তামাদি বটের ঝুরি।
বড় কীটদষ্ট নক্‌শিকাথাঁ, অতএব
উদোম শরীরে শুই, হাই তুলি, গ্রাম ছেড়ে ঘুরি
নির্মুখ শহুরে ভিড়ে,
নিজের ভিতরে পুড়ি। নেই কোনো পরিত্রাতা দেব
কাছে ধারে, ছড়াই নিজস্ব ভস্ম বুড়িগঙ্গা তীরে।
অকস্মাৎ সাড়া জাগে মাছেদের ঝাঁকে,
কেন যেন নতুন ক’রে আনে
বরাভয়, মনে পড়ে কবিতা বুকের কাছে বাম পাশে থাকে
স্পন্দিত সর্বদা, মাঝে-মধ্যে যদিও ভাটার টানে
দূরে সরে যায়।
ব্যাকুল বাড়িয়ে রাখি হাত
জলাশয়ে, হাটে, মাঠে লতাগুল্মে, তার প্রতি বেলা অবেলায়।
কোথাও হঠাৎ
দূর দিগন্তের বুক চিরে বাজে স্মরণীয় বাঁশি,
আসে ব্যেপে কবিতা আমার অলৌকিক বানভাসি।