অন্যরকম যুদ্ধ

তবে কি আখেরে আমি মাথা নত করে চলে যাবো
এমন জাজ্বল্যমান দ্বিপ্রহরে নামিয়ে উষ্ণীষ? যদি যাই,
গাছপালা, নদীনালা, উদাস প্রান্তর, আর ধূসর পাথর
নীল আসমান, রোদ্দুরের
চমকিলা বদ্বুদ পায়রা, বাজপাখি, এমন কি
মালিক, চড়ুই আর শেয়াল-কুকুর
কাপুরুষ বলে দেবে তুমুল ধিক্কার।

প্রতিপক্ষ ডান দিক থেকে ঘনঘন বুক ঠুকে
দিচ্ছে ডাক, ছাড়ছে হুঙ্কার,
বাজে রণঢাক, শুনি অবিরত তুলছে ধনুকে
প্রবল টঙ্কার। অশ্বক্ষুরে
পায়ের নিচের মাটি কম্পমান, মত্ত কেশরের
ঢেউ নাচে দিগ্ধিদিক, জান্তব নিশ্বাস আগুনের
হল্কার মতন এসে লাগে
চোখে-মুখে। পিপাসার্ত মাটি
আমার গরম রক্ত শুষে নেবে বলে সর্বক্ষণ
চাটে শুক্‌নো ঠোঁট।

অথচ এখনো আমি রয়েছি দাঁড়িয়ে
প্রবল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি, মানে বামদিকে
অবিচল। চারদিক থেকে
আসুক তীরের ঝড়, নামুক বিরোধী ঢল, তবু,
মাথা নত করে আমি হবো না উধাও
রণে ভঙ্গ দিয়ে, পরাজিত
মানুষের মতো ঘষবো না মুখ ধুলায় অথবা
বিপর্যস্ত ঘাসে। জানি, সপ্তরথী ক্রুর অবেলায়
আমাকে ফেলেছে ঘিরে, দিচ্ছে হাঁক; অসি,
বল্লম ঝলসে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে, কিন্তু আমি অভিমন্যু নই;
ভয়ংকর ব্যুহ থেকে বেরিয়ে আসার
গূঢ় মন্ত্র এখনো ভুলিনি। উপরন্তু কী অটল
রয়েছে আমার হাতে জ্বলজ্বলে মৌলিক ধনুক।

আমার নিজস্ব তূণ থেকে সহজে আনবো আমি
হিংসার বদলে ভালোবাসা,
আমার রথের চাকা ধ্বংসের প্রান্তরে
করবে কর্ষণ মৈত্রী বৈরিতার কালে,
স্বপ্নের কেয়ারি হবে তৈরি দিকে দিকে। নিত্য ফুল
ফোটাবো ব্যাপক শূন্যে, সে পুষ্পশোভায়
অন্ধ হবে রক্তজবা-চোখে এবং বাঁচার গানে
স্তব্ধ করে দেবো প্রতিপক্ষের হুঙ্কার।