তুমি চুল আঁচড়াচ্ছিলে

এই তো সে রাতের কথা। দেয়াল ঘড়িতে তখন
রাত দশটা থর থর করছে
কবুতরের মতো। লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
তুমি চুল আঁচড়াচ্ছিলে। হলকা মেরুন রঙের
চিরুনির সঙ্গে কেলিপরায়ণ একরাশ কালো দিব্যুৎ
এবং আমি সোফায় বসে দেখছিলাম তোমাকে।

তোমার কাছে গিয়ে কালো বিদ্যুৎগুলো হাতে নিয়ে,
তোমার বুকের দুটো রাঙা টিলায়
মুখ রেখে সময়কে শাসন করার এক প্রবল ইচ্ছা
আমার ভেতর মাতলামি শুরু করছিল।

চুল আঁচড়াচ্ছিলে তুমি; তোমার চুলের প্রপাতের
দু’দিকে গড়িয়ে পড়ছিল সাইকেডেলিক স্বপ্নের মোহন নুড়ি
বয়ে যাচ্ছিল আমার বাসনার দীপাবলি।
তোমার সোনালি বাহুতে, গ্রীবায়
গোলাপি ঠোঁটে, উজ্জ্বল গালে আর গহন দুটি চোখে
জ্বল জ্বল করছিল আমার জন্ম-জনান্তর।

তুমি ঘরময় আলোর জাল কেটে কেটে
সোনার তরীর ধরনে এসে
ভিড়লে আমার সোফার ঘাটে, পিছনে গিয়ে
দাঁড়ালে; কয়েকটি কালো বিদ্যুৎ ছুঁলো আমাকে
আর পরিচিত এক সুঘ্রাণ
আমার চেতনাকে আরো প্রখর
করে তুলছিল। আমার ভেতরকারি প্রণয়ী
তখন জটিল লতাপাতায় জড়িয়ে যাওয়া
সিংঅলা এক ছটফটে হরিণ। এবার তুমি আমার
সামনের সোফায়।

কী গভীর তোমার দৃষ্টিপাত। সেই মুহূর্তে
আমার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারতো; তোমার
দৃষ্টিতে বয়ে যাচ্ছিল যে তারা স্রোত,
তাতে থই পাচ্ছিলাম না কিছুতেই, অমন
রহস্য তুমি কী করে ধারণ করো তোমার দুই চোখে,
কীভাবে আড়াল করো মৃত্যুবাণ? তোমার চোখের
নির্জন অতলে শতবার মরি এবং
সহস্রবার বেঁচে উঠি।

তুমি আবার গিয়ে দাঁড়ালে লম্বা আয়নার সামনে। আবার
শুরু হয় চিরুনি আর দীঘল চুলের মধ্যে
যুগপৎ বিরোধ আর মিতালি। একরাশ কালো বিদ্যুতের
ঝলসানিতে উদ্ভাসিত আমি
বুঁদ হয়ে থাকি গজল অধিকৃত গালিবের মতো
তাৎক্ষণিক চুম্বনের সুঘ্রাণে ভরপুর। তখন
রাত সাড়ে দশটা আমাদের শাসাচ্ছে, অথচ তুমি
অপরূপ আলোকলতার মতো দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলে।

২৮.৮.৯৪