আমার কন্যার জন্যে প্রার্থনা

ক্রমশ সে বেড়ে উঠছে পার্কের গাঢ়তম গাছটির মতোন।
ডাল মেলছে চতুর্দিকে, যেনো তার সংখ্যাতীত ডাল উপডালে
ভ’রে দেবে সৌরলোক- জোনাকিরা জ্ব’লে যাবে
পাখি এসে বসবে ডালে, অখন্ডিত নীলাকাশ
বাতাসে পা ভর দিয়ে আসবে যাবে সন্ধ্যায় সকালে।
শিকড় বাড়াচ্ছে নিচে জল চাই তার
মালির পরিমিত জলে গাছ বাঁচে কখনো আবার!

আগামী বৈশাখে
ষোলোটি বসন্ত এসে দিকে দিকে ভ’রে দেবে তাকে
সে একা দোকানে যাবে কিনে আনবে লিপস্টিক রুজ
মসৃণ দোপাট্টা ক্লিপ শ্যাম্পু জলপাই তেল
তিন বছর ধ’রে তার কিনতে হয় সেনিটারি মসৃণ টাওয়েল
দোকানে দোকানে ঘুরে চোখ থেকে লুকিয়ে সবার
কিনে নেবে মাপমতো একখানি স্নিগ্ধ ব্রেসিয়ার।

নীল গাঢ় মেঘমালা পুঞ্জপুঞ্জ ঝরে তার চুলে
অমিতব্যয়ী উদ্বাস্তু হাওয়ারা এসে তার দেহে বিভিন্ন শ্রেণীর
বাঁক হয়ে সুস্বাদু ফলের মতো ঝুলে
থাকে উদ্যমশীল কোনো পথিকের উদ্দেশে।

আমার ষোড়শী কন্যা কার কণ্ঠস্বর?
কার অলৌকিক স্বরমালা র’টে যাচ্ছে সমস্ত প্রহর
তার মধ্যে? চুল তার গান গায়
নিবিড় শাওয়ার তলে পাঠাগারে শয্যাকক্ষে
সারাক্ষণ কে তাকে নাচায়। সে যে মানে না মানা
বাতাসে হারিয়ে আসে
স্থায়ী অস্থায়ী সবগুলো নিজস্ব ঠিকানা।

বুঝতে পেরেছি আমি কলেজের কোনো কক্ষে
নয়তোবা লাইব্রেরির নির্জন করিডোরে
কোনো যুবক এসে তার স্বপ্নাবলি
বিছিয়ে দিয়েই যাবে তার পদতলে
আমার কন্যা তার স্বপ্ন বুঝবে না কোনো দিন বুঝতে চাইবেনা
সে-যুবক দগ্ধ হবে নিজস্ব নির্মম অগ্নিতে
ফিরে যাবে নিজ কক্ষে রুদ্ধ ক’রে দেবে সব জানালা কপাট
তখন আমার কন্যা উচ্ছ্বসিত বান্ধবীর সাথে
সিনেমায় যাবে
ঘরে ফিরে এসে রাতে হেসে খিলখিল হবে
যুবকের নির্মম বেদনা সে কখনো বুঝতে পারবে না।

কাকে সে গ্রহণ করবে? কাকে দেবে নিজস্ব সৌরভ?
কার ঘরে সে আলো জ্বালবে দুর্ভেদ্য নিশীথে?
কার অসহ্য অভাবে
তার তরু পত্ৰপুষ্প মাটিতে হারাবে?

এদেশ বদলে যাচ্ছে, যা-কিছু একান্ত এর
সবই নির্বিচারে নির্বাসিত হচ্ছে প্রতিদিন
ফ্রিজ ধরে রাখছে ঠাণ্ডা দিঘি সজীব শব্জিক্ষেত্রের স্মৃতি
হোটেলে সবাই খাচ্ছে গৃহ আর কাউকে আনে না
স্নেহময় শর্করার লোভে
বাঙলার মেয়েরা আজ রান্না জানেনা
রক্তনালি অন্য রক্তময়।

আমার কন্যা যার ফ্ল্যাটে উঠবে, সে কি তার মন পাবে?
জয় করে নেবে তাকে? নাকি রঙিন টেলিভিশন দেখার সুখ পাবে
ঝলমলে ড্রয়িংরুমে বসে? রেডিয়োগ্রামে
কড়া বাদ্য বাথরুমে জল
বন্ধুর বক্ষলগ্ন লিপস্টিকে আলোকিত গোধূলিতে
বারবার বক্ষ থেকে খ’সে পড়বে সোনালি আঁচল।

আমার কন্যার ঘর ভেঙে যাবে প্রাত্যহিক সামান্য বাতাসে।
তবুও সে কাঁদবে না কেননা সে কাঁদতে শেখে নি,
হে আমার বন্ধ্যা কন্যা, অন্য কোনো হাত
তোমাকে কি তুলে নেবে মধ্যরাতে ভাসমান উৎসবস্রোত থেকে?
শেখাবে কান্নার অর্থ? বোঝাবে গভীর স্বরে
রোদনের চেয়ে সুখ নেই লবণাক্ত সবুজ মাটিতে?
বলবে মোমের আলো সর্বাত্মক গাঢ় অর্থময়
দ্বৈতশয্যা র’চে যাচ্ছে দুই হাতে সৌর সময়।