এই নিদ্রা (সংযোজিত)

আমার জীবনে কোনও ঘুম নাই
মৎস্যনারীদের মাঝে সব-চেয়ে রূপসী সে না-কি
এই নিদ্রা?

গায় তার ক্ষান্ত সমুদ্রের ঘ্রাণ- অবসাদ, সুখ,
চিন্তার পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন- বিমুখ
প্রাণ তার।

এই দিন এই রাত্রি আসে যায়- বুঝিতে দেয় না তারে; কোনও ধ্বনি ঘ্রাণ
কোনও ক্ষুধা- কোনও ইচ্ছা- পরীরও সোনার চুল হয় যাতে ম্লান:
আমাদের পৃথিবীর পরীদের;- জানে না সে; শোনে না সে জীবনের লক্ষ্য মৃত নিঃশ্বাসের স্বর;

-তা হলে ঘুমোত কবে? সে শুধু সুন্দর,
প্রশ্নহীন অভিজ্ঞতাহীন দূর নক্ষত্রের মতো
সুন্দর অমর শুধু; দেবতারা করে নি বিক্ষত
ইহাদের।

এদের অপার রূপ শান্তি সচ্ছলতা
তবুও জানিত যদি আমার এ-জীবনের মুহূর্তের কথা
মানুষের জীবনের মুহূর্তের কথা।০

দেবতারা করে নি বিক্ষত ইহাদের:
দেবতারা করে নি বিক্ষত নিজেদের
কোনও অভিজ্ঞতা নাই… দেবতার
ঘুঘুদের সাদা ডানা- নীল রাত্রি- কমলা-রঙের মেঘ- সমুদ্রের ফেনা রোদ-
হরিণের বুকে বেদনার
নীরব আঘাত;
এরা প্রশ্ন করে না ক’; ইহারা সুন্দর শান্ত- জীবনের উদ্যাপনে সন্দেহের হাত
ইহারা তোলে না কেউ আঁধারে আকাশে
ইহাদের দ্বিধা নাই- ব্যথা নাই- চোখে ঘুম আসে।

শুনেছে কে ইহাদের মুখে কোনও অন্ধকার কথা?
সকল সংকল্প চিন্তা রক্ত আনে ব্যথা আনে- মানুষের জীবনের এই বীভৎসা
ইহাদের ছোঁয় না ক’;-
ব্যুবনিক প্লেগের মতন
সকল আচ্ছন্ন শান্ত স্নিগ্ধতারে নষ্ট ক’রে ফেলিতেছে মানুষের মন!

গোলাপী ধূসর মেঘে পশ্চিমের বিয়োগ সে দেখে না কি?
প্রজাপতি পাখি মেয়ে করে না কি মানুষের জীবনের ব্যথা আহরণ?
তবু এরা ব্যথা নয়: ইহারা আবৃত সব- বিচিত্র- নীরব
অবিরল জাদুঘর এরা এক;- এরা রূপ ঘুম শান্তি স্থির
এই মৃত পাখি কীট- প্রজাপতি রাঙা মেঘ- সাপের আঁধার মুখে ফড়িঙের জোনাকির নীড়
এই সব।

আমি জানি, এক দিন আমিও এমন
পতঙ্গের হৃদয়ের ব্যথা হব- সমুদ্রের ফেনা সাদা ফেনায় যেমন
ভেঙে পড়ে- ব্যথা পায়…
মানুষের মন
তবুও রক্তাক্ত হয় কেন এক অন্য বেদনায়
কীট যাহা জানে না ক’- জানে না ক’ নদী ফেনা ঘাস রোদ- শিশির কুয়াশা
জ্যোৎস্না: আম্লান হেলিওট্রোপ, হায়!

এ-সৃষ্টির জাদুঘরে রূপ তারা- শান্তি- ছবি- তাহারা ঘুমায়
সৃষ্টি তাই চায়।

ভুলে যাব যেই সাধ- যে-সাহস এনেছিল মানুষ কেবল
যাহা শুধু গ্লানি হল- কৃপা হল- নক্ষত্রের ঘৃণা হল-
অন্য কোনও স্থল
পেল না ক’।