এখনও সে মনে জানে

এখনও সে মনে জানে পাখিনির গর্ভ থেকে জন্ম হয়েছিল চুপে।
এখনও হৃদয়ে আসে বিকেলের বিবেচনাবিহীন বাতাসে
ওতপ্রোত পাখার আবেগ। এইখানে নগরীর জনতার ভিতরে প্রবেশ ক’রে
কী চায় সে?- কোথাও কর্কশ কোনও পাহাড়ের শিঙের উপরে
যাহার হৃদয় একা ব’সে আছে অকৃত্রিম চিলের মতন?

এক দিন- মনে পড়ে- সমস্ত ইন্দ্রধনু- আকাশের
প্রশস্ত পরিধি ঘিরে সিংহদুয়ারের মতো জেগে
পথ ছেড়ে দিত তারে সম্মুখীন নিরাময় সমুদ্রের দিকে;
যে-আলোক কোনও দিন আমরা দেখি নি এই পৃথিবীর স্থলে
নদীর জলকে খুলে, হাওয়ার শরীরে হাত রেখে দিয়ে, বৃক্ষ- যুগ-
স্পর্শ ক’রে- তাহার নির্দোষ চোখে সেই মূঢ় আভা
খেলে যেত এক দিন; যেন সে মুকুর কোনও অতীত যুগের মায়াবীর
আজ কাঁচ প’ড়ে আছে শুধু- উপেক্ষিত জিনিসের মতো সেই ধূর্ত জাদুকর
ভুলে গেছে নিয়ে যেতে- আজ এই শহরের রাত্রির খোঁড়লে
অথবা ঘনিষ্ঠতর প্রাসাদের সীমানায় শিংশপা-গাছের দিকে চেয়ে
মিছেই সে মনে করে মসৃণ লেবুর মতো হয়তো-বা এক-আধ বার
নক্ষত্র’কে হাতে পেয়ে গেল, আহা, সি. ই. সি.’র ডিভিডেন্ডে আক্রান্ত চকোর।
তবুও আকাশ আজ অস্পষ্ট, অন্তত তার কাছে
সমুদ্রের স্ফীত পেট গ্রাম্য এক গর্ভিনীর মতো
নলেনগুড়ের রস- উপভোগ করা যায় সাদা-পেটে চাটাইয়ের ধুলো ঝেড়ে
দশমীর জ্যোৎস্না- শনি- ভাঁড় আর বিড়ালের সাথে ব’সে থেকে

বাতাসের অগ্নি আসে মাঝরাতে- বকযন্ত্রের মতো উঁচু কঠিন দুপুরে
দু’টো ঠ্যাং ঠেঙোর মতন চ’রে জনতার ভিড়ে
আধো-পাখি- আধেক মানুষ আজও- নৃসিংহ’র স্তম্ভের ছায়ায়
শতাব্দীর। সময়ঘড়িরা সব তাহার চোখের দিকে চেয়ে
বেজে চলে- স্পষ্ট জীবনের মতো বড়ো বিহিত আমোদে
করতালি দিয়ে দেখে কানের ভিতরে তার সেই সব অবিকল ধ্বনি
অন্ধকার গুম্ফার ভিতর থেকে প্রতিধ্বনির মতো উগরায়ে ফেলে!
মনীষীর ব্যস্ত মুখ, দীর্ঘ কান, নেউলের মতন লাঙ্গুল!