আমি এক স্থবিরেরে চিনি

আমি এক স্থবিরেরে চিনি
বহু দিন দেখিয়াছি তারে
তখন এ-পৃথিবীতে জন্মি নাই- তবু এই শহরের আলোয় আঁধারে
আমার অজাত আত্মা দেখিয়াছে তারে
সব-চেয়ে আগে সে দাঁড়াত গিয়ে প্রত্যুষের ছাদে-
প্রভাত বিস্ময় ছিল তার কাছে
(মাঝে-মাঝে তসরের কোট গায়ে দিত- কখনও-বা বনাতের
মধ্যবিত্ত বনিতার যত্নে পাট করা
নেপথলিনের গন্ধে মাখা)

যত দিন যৌবরাজ্য ছিল তার- যৌবনের শেষ- যত দিন প্রৌঢ়তা রয়েছিল
তাহার উদ্দেশ ছিল: পেয়ারা-তরুর মতো মসৃণ- কঠিন- সুঘ্রাণ- ব্যবহৃত
তাহার উদ্দেশ ছিল: হাতের আস্তিনে আর ঘাড়ে?
কে শুধায়? কে-বা জানে সমাধান? সে-স্থরির আজ এক মেরুর পাহাড়ে
ব’সে থাকে- কথা ভাবে- কথা ভাবে- কথা ভাবে-
‘সে-সব ঘোড়ায়-টানা ট্রাম আজ শ্রেষ্ঠ নয় আর?
সে-সব গাধা’য়-টানা প্রতিভার দূরদর্শিতার
চশমা করে না আজ কেউ ব্যবহার?
ক-বর্গ কি হেরে যায় খ-বর্গের কাছে?
স্বস্তিকার চিহ্ন ছাড়া পৃথিবীতে আরও কিছু আছে যেন…
কবেকার সেই সব সিন্ধু আর নদী
আজ শুধু মনে হয়: ছিল তারা কর্দমের দধি
আজ শুধু নদী আর সমুদ্রের রূপ বোঝা যায়:
যাহারা বস্তির থেকে নামে না ক’ কোনও দিন তাদের কুপি’র সলিতায়’

আজানু খদ্দর প’রে ন্যাড়া মাথা হেঁট ক’রে কী-যে এক নিগূঢ় মননে
হয়তো-বা নিগূঢ় বুননে
পৃথিবীর মাননীয়দের সিঁড়ি বেয়ে
কৃশ রুগি (দ’হে-দ’হে) নামিতেছে চির-দিন-
ভালো ক’রে এই ছবি দেখে নেয় বিশুষ্ক স্থবির
এ ঢের পুরোনো ছবি: যেন তার পিতামহ দেখেছিল
ভিজে শুঁড় আগলায়ে যেন সেই প্রথম মানব শুঁকেছিল।
যত দিন এ-পৃথিবী কোনও এক নক্ষত্রের জিহ্বার ঘর্ষণে
মাথা-রোগা পিঁপড়ের মতো
ব্যাঙের উদরে শান্ত অন্ধকারে না হবে বিরত
এই ছবি কোনও দূর মেরুভূর দ্বীপে গিয়ে (পাহাড়ের শিঙে ব’সে)
চির-দিন ভাবিবার মতো।