চীন: ১৯৩৭-৩৮

এখন গম্ভীর সূর্য চ’লে যায়
মৃতবৎসা হস্তিনী’র মতো ভীম পাহাড়ের অই পারে
মাছির ডানার মতো ক্ষীণ কলরোল পিছে রেখে (জনমাংসহীন হিমে পৃথিবীর তরে)
জমি উপড়ায়ে ফেলে কুয়াশায় মিশে গেছে চাষা
প্রাচীন লাঙ্গল তার মৃত্তিকার তরঙ্গের এক কোণে আছে
চুরি হয়ে যেতে পারে যেখানে সমুজ্জ্বল নক্ষত্রের নিচে আজ আর
মুকুরের মতো নয়- বিম্ব নাই- অঙ্গীকার নাই আর শতাব্দীর কাছে
অই দূরে ইঞ্জিনের দোকানের ধোঁয়া- সারা-দিন গালভরা ঢের আলপিন- দেশলাই সৃষ্টি ক’রে
অবসর নিয়ে উড়ে যায় আকাশফুলের মতো- নিজের অনন্য প্রয়োজনে
মৃত্তিকার হিম সারা-বেলা তবু হিম- নিরুত্তর- হিম-
অশ্রান্ত রোটারি-প্রেস শব্দ ক’রে
আমাদের উদ্গীরিত জীবনের ইতিহাস রচিতেছে
তবু আমাদের বিধিলিপি আকাশের সপ্তঋষিদের হাতে
হয়তো-বা বুনোহাঁস’দের ভিড়ে
পাখনার অব্যর্থ কৌশল যেইখানে
মগজকে ক্রীড়া ব’লে মনে করে
নক্ষত্রের দিকে তবু যেতে-যেতে পৃথিবীর খই হয়ে ঝরে
অঘ্রানের গাছের থেকে পাতা-
আসিছে শীতের রাত- গভীর শীতের রাত- হে চীন-সৈনিক
মনে হয় আজ যেন পৃথিবীর অন্তঃসত্ত্বার নিরর্থক দিন
চিনি যেন- মানবীর মতো অই দেবদারুগাছ নড়ে কোনও এক অবিকল বিলয়ের তরে
যত দূর চোখ যায় অন্ধকার পৃথিবীর
সময়ঘড়ির কাজ বুনে যায়- বুনিতেছে সাদা নীল ডিম
যেইখানে হাতে পায় পাখিদের মতো কোনও নীড়
উদ্বেলিত জ্যোৎস্না আর তরুদের চোখে শুধু, হে সৈনিক
সপ্রতিভ নদীদের জলে শুধু- মৃত্যু মৃত্যু নয়;
গহ্বরের মতন এক নিস্তব্ধ অবচেতনার থেকে উঠে
হৃদয়ের ভূতাবিষ্ট উপমায় প্রীত হয়ে মনে কবে, আহা,
সুদীর্ঘ দিনের সূর্য মরণের অন্ধকারে নক্ষত্ৰকণার ঘাস গিয়ে
আবার কুড়াতে আছে- আপনাকে বিচার করিতে আছে- প্রাথমিক তেজে।