গভীর শীতের রাত

গভীর শীতের রাত
আমি একা।
জানালায় নক্ষত্র রয়েছে
বাজকুড়ুলের শব্দ ঘুরে-ঘুরে আকাশের নক্ষত্রের দিকে উঠিতেছে
আকাশের প্রতিটি তারা প্রস্তুত হতেছে না কি তাহার শব্দের তরে?
জানালায় সব তারা আড়ষ্ট- অস্পষ্ট- উদাসীন-
তাহাদের মনোযোগ নষ্ট হয় না ক’

হৃদয়ের অবাধ নিয়মে তবু আকাশের নক্ষত্রের দিকে পাখি উড়িতেছে একা
দুর্বল দু’ পাখা মেলে- নষ্ট চোখে- হৃদয়ের দুঃস্বপনে
শীতের বাতাসে
আজ তার বোন নাই
তবু- তবু- নক্ষত্রের দিকে
চমৎকৃত হ’তে হয়

তবু শুধু এক-দুই মিনিটের তরে
বাজকুড়ুলের স্পষ্ট স্ফটিকের মতো চোখে
ঘোলা ঘুম- ঘুমের মতন মৃত্যু নেমে আসে
পারে নাই
এখানে শীতের রাতে অন্ধকারে মোম জ্বেলে
বুঝিতেছে:

কোথাও অনেক দূরে বাহিরের অন্ধকার
পিঁপড়া- পাখিরা সব এলডোরাডোর খোঁজে দিকে-দিকে উড়ে চলিতেছে
তাহাদের এক জন সোনার মতন লাল আগুনের মুখে
এই উড়ে আসে
অনেক বিস্ময় ল’য়ে- অসহিষ্ণু- অসহিষ্ণু হয়ে-

বাহিরের কুয়াশার অসহ্যতা ভুলে গিয়ে
কোনও এক জীবনের আহ্লাদের খোঁজে

ক্রমে-ক্রমে ঝ’রে যায়

দেখি আমি
আমার চোখের নিচে এসে তারা
অস্পষ্ট মৃত্যুর হাতে ধরা দেয়
তাহাদের পাখা প’ড়ে থাকে
পাখা ক্রমে জড়ো হয়ে যায়
এই মৃত পাখিদের

তবুও তাদের আমি জানালার পথ থেকে
শীতের রাতের এই অবিশ্রাম কৌশলের থেকে
ফিরায়ে দেব না না-কি?

কেন দেব?

আমার প্রশ্ন প’ড়ে থাকে
সমস্ত শীতের রাত ব’সে
জানালার ফাঁক দিয়ে পিঁপড়া- পাখিরা এসে সেই সব শোনে না ক’
আমারে দেখে না তারা
সমস্ত শীতের রাত ধ’রে
তাহাদের ক্লান্ত কাজ সেরে যায়
পাখা- পাখা- পাখা তবু প’ড়ে থাকে
আমার হৃদয় তবু কবিতা জানে

কোনও এক বাহিরের শীতের ভিতর থেকে এই সব পাখিদের মতো
সে-ও এক পাখি না কি?
সে-ও কি তাদের মতো উড়ে যায় না কি

কুয়াশার দাঁত থেকে কুয়াশায়
শীতের ভিতর থেকে শীতে
অন্ধকারে- অন্ধকারে
ঘৃণা- হিংসা- অবসাদ- মৃত্যুর চোয়ালে
যায় না কি?
যে-বালিকা কোনও দিন জানে নাই পাপ-
তবু প্রতারিত হয়ে গেছে-
এ-হৃদয় তার মতো না কি?

হৃদয় কর্কশ হয়ে ওঠে না কি
বালিকার মতো নয়- তিক্ত মেয়েমানুষের মতো পথের উপরে?

হৃদয় কঠিন হয়ে ওঠে তাই
শীতের নির্জীব রাতে- এইখানে ব’সে

কখন সকাল হয়ে যায়
তখন মাছিরা আর আসে না ক’
বাহিরের আবছায়া নাই আর-
কোথাও পাই না খুঁজে তাহাদের
এইখানে জানালার দিকে চ’লে আসে
তেমন একটি প্রাণী নাই আর
সেই সব জীবন্তেরা স’রে গেছে
পাখা- পাখা- পাখা তবু প’ড়ে আছে

হৃদয়ে তবুও কোনও ক্ষোভ নাই-
কেন রবে?
অন্ধকার কুয়াশায়- শীতের ভিতর থেকে শীতে
আমরাও ঘুরি না কি এই সব পাখিদের মতো?

ক্লান্ত- নষ্ট হই-
আমাদের কে দেখায়ে দেয়?
এই সব আমাদের পাখা
শীতের সকালবেলা প’ড়ে আছে

গভীর সাহসে তাই হৃদয় ভরিয়া গেল
আমারে সবার চেয়ে অন্ধ- একা মনে ক’রে
চারি দিকে পৃথিবীর অন্ধকার দেখে
কুয়াশার দাঁত দেখে চারি দিকে
শীতের রাতের এই নিশ্চয়তা জেনে
জীবনের অস্পষ্টতা মনে ক’রে
আমার সাহসে- প্রেমে- স্বপ্নে- সাধে- শূন্যতায়-
আমি দেখিলাম
এ-সব আমার পাখা
শীতের সকালবেলা প’ড়ে আছে।