কাঁঠালগাছের ছায়া পড়িয়াছে

কাঁঠালগাছের ছায়া পড়িয়াছে এইখানে ওল-ঘেঁটু-আকন্দর গায়ে
আবিরের রংমাখা জামা প’রে হেঁটমুখে কে আছে দাঁড়ায়ে
মাস্টারমশায় না-কি? ঘাসের ভিতর তার কী গেছে হারায়ে

মাস্টার বলে না কথা- এইখানে পাড়াগাঁর একটেরে রোজ
কাকের ডানার গন্ধ-মাখা পথে চ’লে আসে নরম- সহজ
ম্লান বাসকের বনে বুনো আনারস ঝোপে করে কার খোঁজ

কেমন যে চেয়ে থাকে- মনে হয় মাটির ভিতর থেকে উঠে
হয়তো রূপসি কোনও চন্দ্রমল্লিকার মতো র’বে ফুটে
মাস্টারের চোখোচোখি মৃত পত্নীর মতো সুন্দর ফুটফুটে

এই চরে- এই নদীটির পাশে এই আম-হিজলের বনে-
তখন ছিল না ডোম-বস্তিটা- পাড়াগাঁর আমরা ক’ জনে
এক দিন জ্যোৎস্নায়- অঘ্রানের জ্যোৎস্নায়- আজও পড়ে মনে

মাস্টারের সেই মৃতা স্বর্ণলতা- আহা, সেই আলোকলতারে
সোনার চিতার মতো চিতল মৃগীর মতো রূপসিরে নদীটির পারে
পোড়ায়েছি; এত ব্যথা পাই নাই কোনও দিন শবের সৎকারে

(কেমন যে চেয়ে থাকে- মনে হয় মাটির ভিতর থেকে উঠে
হয়তো রূপসি কোনও কাঠমল্লিকার মতো র’বে ফুটে…
আগুন নিভিয়া যায় আমারও চুরুটে)

তবু জানি সেই রূপ কোনও দিন ভস্ম হয় না ক’
কাকের ডানার গন্ধ-মাখা কোনও সন্ধ্যায় যদি তারে ডাকো
রূপসি প্রেতিনী সেই আসিবেই- দেখা পাবে- মাস্টারের মতো যদি ঠায় চেয়ে থাকো

দেখিবে ডাহুকী উড়ে গেল তার নীড় থেকে ভয়ে
মাছরাঙা ডেকে কেঁদে উঠেছে বিস্ময়ে
নলখাগড়ার বনে হু-হু হাওয়া- হাওয়া নহে- নহে

অই শোনো: থেমেছে ঝিঁঝির ডাক- দম আটকায়ে চুপ করেছে বাতাস
লকলক করে শর- খসখস ক’রে ওঠে কাশ
শ্যাওড়া দুলিয়া পড়ে- দমকায় মড়মড় ক’রে ওঠে বাঁশ

বিবর্ণ বিস্ময়ে আমি ঢুল খাই- বিবর্ণ বিস্ময়ে
(কাদাখোঁচা) মাছরাঙা কেঁদে ওঠে ভয়ে
নলখাগড়ার বনে হু-হু হাওয়া- হাওয়া নহে- নহে

বিবর্ণ বিস্ময়
দাঁড়কাক মগডালে উড়ে গিয়ে চোখ বুজে রয়
শরের বনের পাশে মানুষ ও প্রেতিনীতে মিলে কথা কয়।