মহিষ

গরমের দুপুর প’ড়ে আসছে
কিন্তু জলের পাইপ খুলে দিলে
রাস্তায় জল দেবার জন্য
পায়ে-চলা মানুষদের মুখে ধুলোর ছিটে উঠছে
কী বিরক্তি তাদের!
সাইকেলে যে চলছিল কী অসোয়াস্তি তার
ট্রামের ড্রাইভার খানিকটা বিব্রত
ঘোড়ার-গাড়ির গাড়োয়ান গাল পাড়ছে
ভিস্তিকে
মহিষের গাড়ি আসছে
মহিষ দু’টোর বিরাট গভীর নাক
অনেক দূর থেকে জলের গন্ধ শুঁকতে পেয়েছে
বড়ো-বড়ো চোখ উঁচু ক’রে আস্বাদের দিকে আসছে তারা
নাক তাদের ফুলছে
লেজ দুমড়ে মুড়ে উঁচু হয়ে উঠছে
এক মুহূর্তের জন্য তারা আর নিরীহ নয়
জলের ফোয়ারা দেখছে-যে তারা
কিন্তু কর্পোরেশনের ভিস্তি তার কাজ জানে
এক দিনও এক ফোঁটা বেটপকা জলও তার পাইপের থেকে ফসকায় নি
রাবিশের-গাড়ির চাকাকেও বরাবর সে কাঁদিয়ে দিয়েছে
এই ভিস্তি- বেকুব নয়
বেয়াদব নয়
শুকনো কঠিন ধূসর আগুন মহিষ দু’টোকে সে পথ ছেড়ে দিয়েছে
তাদের রৌদ্র আগুনের পথে
তাদের রৌদ্র আগুনের পথে
এই প্রতিভা ও সততা আছে ব’লেই ভিস্তি প্রয়োজনীয় মানুষ
তুমি প্রয়োজনীয়
আমি প্রয়োজনীয়
আজকের শহর- পৃথিবী- ব্যবসা- উন্নতি… প্রয়োজনীয়
দু’টো মহিষকে জলে-জলে ভিজিয়ে দেবার কথা কারু মনে হয় না
মহিষ দু’টোর নাকের বিরাট গর্তের ভিতর কী স্পন্দন
কী স্পন্দন!
দুপুরের ঝড়ে কালো তাঁবুর মতো ফুলে ফাঁক হয়ে পড়ছে
চোখের ড্যালা-ডিমের ভিতর কী স্পৃহা
জলের ছলছল শব্দের উৎসাহে পবিত্রতা সান্ত্বনা রাস্তার কফ বমি ও ঘোড়ার পেচ্ছাপ গিলছে শুধু
পাইপের মুখ
জ্যৈষ্ঠের দুপুরের এই মহিষদের দিকে ঘুরিয়ে দেবার মতো বোধ করছে না কেন
এই সব কথা ভেবে সমস্ত চকচকে ভিজে রাস্তাটাও
নিজেকে যেন নিতান্ত ময়ূরের পেখমের এক গাদার মতো মনে করছে
ঝিকমিকে ময়ূরের পেখমের মতো শহরটার দিকে তাকিয়ে দেখছে সে।