মকরসংক্রান্তির রাতে

(আবহমান ইতিহাসচেতনা একটি পাখির মতো যেন)
কে পাখি সূর্যের থেকে সূর্যের ভিতরে
নক্ষত্রের থেকে আরও নক্ষত্রের রাতে
আজকের পৃথিবীর আলোড়ন হৃদয়ে জাগিয়ে
আরও বড়ো বিষয়ের হাতে
সে-সময় মুছে ফেলে দিয়ে
কী এক গভীর সুসময়!
মকর’ক্রান্তির রাত অন্তহীন তারায় নবীন:
-তবুও তা পৃথিবীর নয়;
এখন গভীর রাত, হে কালপুরুষ,
তবু পৃথিবীর মনে হয়।

শতাব্দীর যে-কোনও নটীর ঘরে
নীলিমার থেকে কিছু নিচে
বিশুদ্ধ মুহূর্ত তার মানুষীর ঘুমের মতন;
ঘুম ভালো,- মানুষ সে নিজে
ঘুমাবার মতন হৃদয়
হারিয়ে ফেলেছে তবু।
অবরুদ্ধ নগরী কি? বিচূর্ণ কি? বিজয়ী কি? এখন সময়
অনেক বিচিত্র রাত মানুষের ইতিহাসে শেষ ক’রে তবু
রাতের স্বাদের মতো সপ্রতিভ ব’লে মনে হয়।
মানুষের মৃত্যু, ক্ষয়, প্রেম, বিপ্লবের ঢের নদীর নগরে
এই পাখি আর এই নক্ষত্রেরা ছিল মনে পড়ে।

মকর’ক্রান্তির রাতে গভীর বাতাস।
আকাশের প্রতিটি নক্ষত্র নিজ মুখ চেনাবার
মতন একান্ত ব্যাপ্ত আকাশকে পেয়ে গেছে আজ।
তেমনই জীবনপথে চ’লে যেতে হ’লে তবে আর
দ্বিধা নেই;- পৃথিবী ভঙ্গুর হ’য়ে নিচে রক্তে নিভে যেতে চায়;
পৃথিবী প্রতিভা হ’য়ে আকাশের মতো এক শুভ্রতায় নেমে
নিজেকে মেলাতে গিয়ে বেবিলন লণ্ডন
দিল্লি কলকাতার নক্‌টার্নে
অভিভূত হ’য়ে গেলে মানুষের উত্তরণ মাঝপথে থেমে
মহান তৃতীয় অঙ্কে: গর্ভাঙ্কে তবুও লুপ্ত হ’য়ে যাবে না কি!-
সূর্যে, আরও নব সূর্যে দীপ্ত হ’য়ে প্রাণ দাও- প্রাণ দাও পাখি।

কবিতা। আশ্বিন ১৩৫২