মৃত্যুর ফিরিস্তি

আমাদের হাতে সারা-দিন কী কাজ আছে
যখন হেমন্ত তার নদীকে আনে
(আর নগরীকে)
যখন শীতের রাতে বৃষ্টি পড়ে
সেকেলে প্রাসাদের ফাটলের পরগাছার উপর
অথবা এই নগরীর বিদ্যুতের তারে
এই গ্রহ যে ঢের পুরাতন
আমরাও ঢের দিন পুরোনো গ্রহে বেঁচে থেকে-যে উদ্ভিদপাথরের মতো হয়ে গেছি
সম্রাটের কাছ থেকে-যে ঢের সম্মান পেয়েছি
সে-সব ভুলে গিয়ে মৃত্যুকে আবিষ্কার করতে যাই আর এক বার
(কোনও আশাতীত প্রবেশের পথ রয়ে গেছে
এবং প্রবেশ ক’রে বার হবার
কিন্তু অন্য এক মৃত্যুর ভিতর দিয়ে)
পতঞ্জলি আবিষ্কার করেছিল- জারাথুস্ট্র করেছিল- ভারু দত্ত ও ফলস্টাফ করেছিল।
আর আধুনিক জ্ঞানীরা।
বালুঘড়ির বিলুপ্ত বালির মতো সে-সব মৃত্যু
সিলিকনের সমুদ্রে হারিয়ে গেছে
সেই সব পিতৃপুরুষ প্রবেশ ও নির্গমনের পথ পায় নি
শুধু দূর থেকে অনুভব ক’রে অবশেষে
পুরোনো মৃত্যুর ফিরিস্তি নির্ণয় ক’রে গেছে তারা

কোনও এক অন্য মড়কের দেশে যেতে হবে।
কোনও এক অনাবিষ্কৃত গ্রন্থ পড়তে হবে
হেমন্তের রাতে সব-চেয়ে উজ্জ্বল
কিংবা সব-চেয়ে দূরতম নক্ষত্রের (কাল্পনিক) গতিবিধি
নিয়মিত ক’রে নিতে হবে
কিন্তু কোথাও ঘণ্টার শব্দে সময় ঘোরালো হয়ে উঠেছে
কোথাও সভ্যতার শোরগোল ও পতন হয়েছে
তবুও হোনানের বন্দিনীদের ক্যাম্পে
কিংবা হোয়াংহো নদীর উপরে ডাকাতেরা
নবভূমিষ্ঠ শিশুকে দেখে ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে
কোথাও র’টে যাবে উৎপূর্তির চোখে মানুষের বংশ দেখা দিয়েছে অরণ্যের মতো
অরণ্যের নীল রেখা দেখা দিয়েছে বর্তুল ক্যারাভেনের মতো
তার পর এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে সব
ঝিরঝিরে ঠান্ডা হাওয়া সেই অরণ্যজাত সারসগুলোকে উড়িয়ে দিয়েছে
তাদের ডানার থেকে অজ্ঞাতসারে যে-সব বীজ ছড়িয়ে পড়েছে
সে-সবের থেকে জীবনের সূচনা- বনানীর
সেই থেকে পতন আবার
যেন মৃত্যুকে বার-বার ঠকাবার ভার কোনও মাদাম ব্লাভাস্কির হাতে
যেন মাদাম ব্লাভাস্কিকে ঠকাবার ভার।
আমাদের আজকের মৃত্যুর খসড়া এই রকম।

তবুও মৃত্যুর দলে এবার অসম্ভব ভিড়।
কিন্তু আজ আমাদের মরণ যদি সমস্ত অতীত মৃত্যুর মতো হয়
তা হলে এই বিমিশ্র কানের বিদূষক আবার তার মাথায়
সেই সব চেনা টুপির চরিত্র বহন ক’রে চলবে।
আমরা অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি-
অনেক সৈকতের বালি ও আকাশের তারা দেখেছি
অনেক বাজেট-মিটিং’এর কাজ শেষ হয়ে গেছে
আমরা সম্রাটের কাছ থেকে অনেক সম্মান পেয়েছি
বয়স্যের কাছ থেকে অনেক উপহাস
জনতার কাছ থেকে স্বর্গীয় অশ্বের অনেক করুণ প্রতিশ্রুতি
তার পর অনুভব করি: মৃত্যু জীবনের সাথে দেয়ালা করে না আর
মানুষের জীবন: অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা, মানুষের মৃত্যু: নির্দিষ্ট তারিখ
আমি সেই দূর পৃথিবীকে দেখি-
আমাদের কেউ কি সেখানে পৌঁছেছে?
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে বিলোল বাতাসের শব্দ শুনে
সেই জরাসন্ধর থেকে আজ এই শরতের ব্রেনার বর্ত্মে মৃত্যুর সঙ্কল্প ক’রে গেছে
সেই তুঙ্গভদ্রার থেকে আজ এই কয়লা ও বংশাল অরণ্যের ঠিকাদারদের
এই সব অব্যবহিত মৃত্যুর উপর সেই অপর মৃত্যু
দূর জনশ্রুতির মতো
আসন্ন ভোরের সূর্যে রক্তের চেয়ে জলের দাম হবে মূল্যবান
যাতে জলের চেয়ে রক্তের মূল্য বেশি হয়-
এই মৃত্যুর চেয়ে অপর মৃত্যুর
এই সব নিঃসঙ্গ জীবনের চেয়ে অপর জীবনের।