নানা রূপ বিকলাঙ্গ রূপ নিয়ে

নানা রূপ বিকলাঙ্গ রূপ নিয়ে জীবনের প্রয়াসকে তুমি
বার-বার প্রমাণিত ক’রে গেছ মানুষের, তার মননের
আবহমানের পথে প্রবাহিত ইতিহাস ব’লে।
অনুভব ক’রে নিয়ে ভোরের শান্ত রৌদ্রে আমাদের শ্বাস
পাথরের মতো যেন মনে হয়। তবুও পাথর
অচেতন। আমাদের জ্ঞাতসারে বেদনা রয়েছে
নিঃশ্বাসের। অন্ধকার সমস্ত শাস্তির
প্রথম ও শেষ বিচিত্রতা নেড়ে অনুভব করি
সকলই আশানুরূপ; আমাদেরও অন্তর্যামী হাত
তেমনই নিটোল ভাবে নিয়ে নেয় যেমন অটুট
মর্যাদায় বিকম্পিত হয়ে উঠে তুমি
আমাদের দান কর- হে জ্ঞান, প্রমাণ-সাপেক্ষ ইতিহাস,
সর্বদাই নীল যবনিকা দেখি চোখের সুমুখে
প’ড়ে আছে- সর্বদাই সেই ঘন নীল যবনিকা
কোথাও দৃষ্টির পথে নেই আর- সর্বদাই নেপথ্যের থেকে
দৈব-বাণী হয়ে যায়- চারি-দিকে তবুও কোথাও
নেপথ্যের দৈব-বাণী নেই- শুধু রঙ্গমঞ্চে জীব
বিখ্যাত বস্তুর মতো ন’ড়ে যায়- তবুও কোথাও
বস্তু নেই- এমনই গভীর বাস্তবতা নিয়ে আমাদের চোখে
খেলা ক’রে চ’লে যায় অবাস্তব- তবুও কোথাও
যায় না সে- চোখের সমুখে চির-কাল।
হে বিবর্ণ ইতিহাস, তোমাদের (নিজেদের) নিবিষ্ট নিয়মে
কিছুই উজ্জ্বলতর হবে না ক’ কোনও দিন
কিছুই মলিনতর হবে না ক’- আমাদের গভীর বিপদ
এমনই আবছা-লোকে অভিভূত রেফ্রিজেরটরে
জীবন্মৃত, জীবিত ও মৃতের ফসল বুকে নিয়ে
প’ড়ে আছে- নিরীহ, উদ্ভিজ, মনোরম
চারি-দিকে বায়ু তবু দূর থেকে অপর বায়ুকে
টিটকিরি দিয়ে যায়- জলের প্রতিভা বেগে অপর জলকে
চূর্ণ ক’রে ছায়া-লোকে আমাদের নির্মম শান্তিকে
কেবলই বিপন্ন ক’রে দিয়ে যায়। (সোনালি মোরগ অন্ধকারে
কেবলই সূর্যের লোভে সন্তপ্ত শক্তির মতো ডাকে।
তবু শান্তি চাই। মৃতদের সাথে চাই। তাদের জীবন
পুনরুজ্জীবিত ক’রে- বিপদে অধীর।)

নিজেরাও। সকলেই দীপ্তি চাই, হে অনাদি ইতিহাস-জীব
সেই তাৎপর্যের দিকে আমাদের সকলকে প্রবাহিত ক’রে
নিয়ে যাও: অস্পষ্ট তাৎপর্য থেকে সৃজনের জীবন্মৃতদের
মৃতদের মুক্ত ক’রে মেধাবী দৃষ্টির পথে তুমি
প্রমাণিত ক’রে যাও যা হয়েছে, যা হতেছে, অথবা যা হবে
সকলই সময়রাশি; সত্য; তবু আমাদের কল্পিত সময়
নয় ব’লে আমাদের ছায়াময় পরিকল্পনাকে
স্বর্গ, মর্ত্য, বৈকুণ্ঠের লোক ও নরক
বানাতে- ভাঙাতে গিয়ে- তবুও অপর ভাবে নিজে
অর্থময়;- পৃথিবীর জীবিত ও মৃতদের ধ’রে
সেই অর্থ-পরিসরে তুলি নিয়ে এক দিন কখন বাঙ্ময়
ক’রে দেবে- ভয় ক’রে, প্রেম ক’রে, বধ ক’রে বিচ্ছিন্ন মানুষ
তবু সেই পথ দেখে সর্বদাই এক তিল দূরে
আছে আজও: যেমন রাত্রির শেষে সোনালি মোরগ
নিজের মৃত্যুকে ভুলে সন্তপ্ত শক্তির পূর্ণ বেগে
কলরোল ক’রে ওঠে অন্ধ এক জ্যোতির ভিতরে।