নিরালোক

এক বার নক্ষত্রের দিকে চাই- এক বার প্রান্তরের দিকে
আমি অনিমিখে!
ধানের খেতের গন্ধ মুছে গেছে কবে
জীবনের থেকে যেন; প্রান্তরের মতন নীরবে
বিচ্ছিন্ন খড়ের বোঝা বুকে নিয়ে ঘুম পায় তার;
নক্ষত্রেরা বাতি জ্বেলে- জ্বেলে- জ্বেলে-‘নিভে গেলে- নিভে গেলে?’ ব’লে তারে জাগায় আবার;
জাগায় আবার!
বিক্ষত খড়ের বোঝা বুকে নিয়ে- বুকে নিয়ে ঘুম পায় তার,
ঘুম পায় তার।

অনেক নক্ষত্রে ভ’রে গেছে এই সন্ধ্যার আকাশ- এই রাতের আকাশ;
এইখানে ফাল্গুনের ছায়া-মাখা ঘাসে শুয়ে আছি;
এখন মরণ ভালো,- শরীরে লাগিয়া র’বে এই সব ঘাস;
অনেক নক্ষত্র র’বে চির কাল যেন কাছাকাছি।

কে যেন উঠিল হেঁচে,- হামিদের মরখুটে কানা ঘোড়া বুঝি!
সারা দিন গাড়ি-টানা হল ঢের,- ছুটি পেয়ে জ্যোৎস্নায় নিজ মনে খেয়ে যায় ঘাস;
যেন কোনও ব্যথা নাই পৃথিবীতে- আমি কেন তবে মৃত্যু খুঁজি?
‘কেন মৃত্যু খোঁজ তুমি?’- চাপা ঠোঁটে বলে দূর কৌতুকী আকাশ।

ঝাউফলে ঘাস ভ’রে- এখানে ঝাউয়ের নিচে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে;
কাশ আর চোরকাঁটা ছেড়ে দিয়ে ফড়িং চলিয়া গেছে ঘরে।
সন্ধ্যার নক্ষত্র, তুমি বল দেখি কোন্ পথে কোন্ ঘরে যাব!
কোথায় উদ্যম নাই, কোথায় আবেগ নাই,- চিন্তা স্বপ্ন ভুলে গিয়ে শান্তি আমি পাব?
রাতের নক্ষত্র, তুমি বল দেখি কোন্ পথে যাব?

‘তোমারই নিজের ঘরে চ’লে যাও’- বলিল নক্ষত্র চুপে হেসে
‘অথবা ঘাসের ‘পরে শুয়ে থাক আমার মুখের রূপ ঠায় ভালোবেসে-
অথবা তাকায়ে দেখ গরুর গাড়িটি ধীরে চ’লে যায় অন্ধকারে সোনালি খড়ের বোঝা বুকে;
পিছে তার সাপের খোলস, নালা, খলখল অন্ধকার- শান্তি তার রয়েছে সমুখে;
চ’লে যায় চুপে-চুপে সোনালি খড়ের বোঝা বুকে-
যদিও মরেছে ঢের গন্ধর্ব, কিন্নর, যক্ষ,- তবু তার মৃত্যু নাই মুখে।’