নির্জন শীতের রাতে

নির্জন শীতের রাতে হয়তো-বা মৃত্যু হবে আজ
আমি এই শীতের বিকেলবেলা তবু- শেষ-বার- এই পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখি
চাষীর ফসল কবে গেছে ঘরে;- তবুও লাঙ্গল তার বাদামি জমিতে
আবার রয়েছে প’ড়ে- আবার কর্ষণে মাঠ পিঙ্গল, কালো ক’রে দিয়ে
অশ্বত্থের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়েছে- অথবা সেখানে শুধু কৃশ এক বাবলার দেহ
যেন তার সব মাংস-বর্বরতা ঝ’রে গেছে পউষের শৌখিন শীতে
মাটির চুম্বকে শুধু- দাঁড়ায়ে রয়েছে আজও নিথর জমিতে
নিট হয়ে। তা না হলে প্রাণ তার ভারতীয় মায়াবীর দড়ি
বেয়ে-বেয়ে মুছে যেত নিরঙ্কুশ-
বেকুবের মতো হেসে হেঁট হত আমাদের সময়ের ঘড়ি

চকিতে সে চ’লে গেল- জমি উপড়ায়ে ফেলে- সাগরের ভূতের মতন
মনে হয়, পাথরের মতো যেন স্তব্ধ হয়ে আছে বহু ক্ষণ
পৃথিবীর সব বায়ু। তার পর অকস্মাৎ আলোর তাড়নে যেন তুড়ি দিয়ে বাংলার সকল মৃতেরা
কথা ব’লে বিকেলের সূর্য-বিম্বে ন’ড়ে উঠে
যত দূর চোখ যায় আকাশের ব্যাসের ভিতরে
এক সারি কালো দাঁড়কাক রুক্ষ করুণায় ওড়াউড়ি করে
বাদামগাছের থেকে রবারগাছের মোহে- মৃত এক বাড়ির গম্বুজে
যখন সকল সোনা ছাই হয় পৃথিবীতে শীতের বিকালে

সহসা নতুন অর্থ হাতে পেয়ে- জীবনের, বিবেকের, মৃত্যুর
পউষের বিকেলের পৃথিবীতে সূর্য এই ক্ষণজন্মা সুর
ভালোবাসে- দাঁড়কাকদের ক্লিষ্ট মুখ থেকে বার হয়ে
শস্যহীন প্রান্তরের পাশে
গ্রথিত হতেছে সব পৃথিবীর গূঢ় মেরুদণ্ডময় ইতিহাসে।