নিশীথের বায়ু

‘কোনও সুস্থিরতা দিও মোরে’ বলিলেই কোনও নিশ্চয়তা আনিবে না নিশীথের বায়ু
রজনীও অবসর নয়;
অনেক নিশীথে মোরা ধীরে- যেন বায়বীয় ত্রস্ত প্রাণায়াম ক’রে
বায়ুর গেলাস ধ’রে কোনও এক প্রিয়তম ঘুমের আরক অধরের পাশে নিয়ে
চুপে-চুপে ফিরায়ে দিয়েছি সেই সুধা- নিশীথেরে, ঘুমেরে, মৃত্যুরে;
পৃথিবীর প্রবল আবেগ:
আমাদের যূথ- উষ্ট্রযূথ- (অন্ধকারে পরিত্যক্ত উঁচু-উঁচু জাহাজের ফানেলের মতো)
আমাদের অবিরল ধূম্র গ্রীবা- আমাদের হ্রেষা-
দ্বিধাহীন অপরূপ খুরের প্রতিভা চাহিতেছে বটে।
চৈত্র-নীলিমার রূপ নয়- জীবনের জয় নয়-
কোনও… আবিষ্কার নয়
শুধু সূর্য সারা-দিন যেন ঢের নিরপেক্ষ বধূ প্রেমিকার সাথে
বিচিত্র ছটার ঢের মেঘললনার কোলে চ’ড়ে
স্থবির রাজার মতো কোনও ক্রূর লেজেন্ডারি সমুদ্রের বিছানায়
পরিতৃপ্ত মনীষার নিবিড় নিশ্চিন্ত ঘুমে শান্তি পায়
নক্ষত্রেরা শুধু যেন তাহাদের পরিচ্ছন্ন চোখের নিকটে থেকে
সমুজ্জ্বল কর্তব্যের হৃষ্ট ঘড়ি বার ক’রে নিয়ে আসে।
মরুভূর শব্দহীন গ্রন্থাগার কোনও এক ক্ষমাহীন বিবেকের চাবি দিয়ে খুলে যেন
আধাে-অন্ধকার পাণ্ডুলিপি প্রসারিত ক’রে দেয়
আমাদের রোমাঞ্চিত অন্তরের তরে।
বিশৃঙ্খল দীর্ঘ গ্রীবা তুলে মোরা মরুভূর জীবের মতন
এক-আধ বার যেন মানবাত্মা পেয়ে এই সব দেখিয়াছি- অনুভব করিয়াছি-
আমাদের নির্বাপিত পিতৃলোকদের হাড় দিকে-দিকে রয়েছে ছড়ায়ে
তারা কোনও নবতর কথা জানে না ক’ আর শুধু এই ছাড়া:
ভোরের বাতাস এক স্থির নিশ্চয়তা আজ আনিতেছে তাহাদের তরে
এরা জীবনের- স্মরণীয় দীর্ঘ দিবসের অবিরাম চক্রাকার গতির মনীষা তারা সমাপন ক’রে
মরণের পরে হাড়ে মানব-মন- শান্ত পুরোহিত-আত্মা- পেয়ে গেছে অবশেষে
অপরিমেয় জীবনের স্মৃতি
বধিরের স্থবিরের মতো এই ব্যাপ্তি নিয়ে এক উপনীত পাহাড়ের মতো
সকল নক্ষত্র-রোল দূর ক’রে তাহাদের এই বার অন্ধকার অবসর দিল।
জলের উপর দিয়ে তারা এই বার মায়াবীর মতো হেঁটে যাবে
তবু কোনও পিপাসার প্রয়োজন অনুভব করিবে না আর
এই বার তারা ইন্দ্রধনু স্পর্শ ক’রে তবু বুঝিবে না:
তারা কিছু চেয়েছিল, স্পর্শ করেছিল।