পথে যেতে-যেতে

পথে যেতে- পথে যেতে-যেতে
সরাইখানায় আমি সারা-দিন কাটালাম
অনেক বিতর্ক ক’রে নারী আর জন্তুদের সাথে
কাঁচের গেলাসে সূর্যবিম্ব পান ক’রে নিয়ে প্রমত্ততায়
কেউ-কেউ ব’লে গেল: আজ তুমি শব:
চার-দিকে চারখানা দেয়ালের ধূসরতা
পরিশিষ্ট গণিতের মতন নীরব।
এই তবে শেষ বাঁক সমাপ্ত পথের?

মানুষের মৃত্যু হয় একটি নারীকে ভালোবেসে
– পিতাদের কাছে তার শীতল, সমূহ ঋণ
শোধ ক’রে দিতে হবে এই হৃদয়োৎসাহে ক্লান্ত হয়ে
মনের মতন ক’রে কোনও এক মেধাবী সমাজ
গ’ড়ে যাবে;- এই কাজে লিপ্ত হতে গিয়ে মৃত্যু হয়।
এই সব সরল ব্যাপার নিয়ে মানুষের মৃত্যু চির-দিন।

আজ এই পৃথিবীতে আমাদের আয়োজন- তবু
প্রসিদ্ধ পঞ্চম অঙ্কে যেই সব শোরগোল শুরু হবে
তারই ছায়া। এক দিন সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্র, নরক বানায়েছি।
আমরা বহুল হয়ে বেড়ে গেছি (তবু) আজ।

আজও তবু আমাদের ভগ্নাংশের মতন হৃদয়
সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, ভাঁড়, গবেষক, কবির মতন
সর্ষের বীজ থেকে স্বাতী, ধ্রুব, লুব্ধকের বৃত্তে গিয়ে করে আরোহণ
ধূসর স্তম্ভের ‘পরে তির্যক রশ্মির মানে খুঁজে
একটি মানের থেকে অনন্ত মানের ঈর্ষা বুঝে
বিলোল মুখের মতো ভেসে ওঠে তারা সব অনুক্রম ভুলে
পাণ্ডুর, গলিত রোগে ক্লান্ত হ’ত মরুভূমি তাহাদের ছুঁলে।
সর্বদাই আমাদের হাতের নিকটে কক্ষান্তর
র’য়ে গেছে। আমাদের সকলের সাধারণ লক্ষ্যের ভিতর
পৃথিবী ধোঁয়ার মতো নিভে চ’লে গেলে
আমরা তখন তাকে পিছে রেখে চ’লে যাব।

আমাদের মহড়া চলেছে:
অনেক বৃহৎ কাজ, আশ্চর্য বক্তৃতা সব শুরু হবে এক-দিন।
মৃত্যু আমাদের কক্ষে চ’লে এসে অতীতের ভাঁড়ের মতন
ভিড়ে চাপা প’ড়ে যায়;- কেননা মৃত্যু কোনও নবীন আশ্চর্য সংঘটন
নয়; (এই সব সাধারণ অবজ্ঞার কথা নয়।)
মৃত্যু শবকে চায়- এই তার তন্ময়তা
কোনও এক অবিচল বাণমুখ নেই তবু আমাদের (আর আজ)
নানাবিধ কাঁটা, ক্রুশ, কম্পাস, তৌলদণ্ড, জরিপের ফিতার ভিতরে
আমরা বহুল হয়ে ছড়ায়ে যেতেছি
এক ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য এক ঘরে
চ’লে যাই;- এক দ্বার ছেড়ে দিয়ে অন্য এক দ্বারে
এক আলো ছেড়ে দিয়ে অন্য অন্ধকারে।

নিঃশব্দ তির্যক রশ্মি নেমে আসে পাথরের ঘাসের উপর
কোনও বস্তু, কোনও প্রেম, কোনও সত্য, সমাজের বিশুদ্ধ নিয়ম
কিম্বা ভয়, প্রত্যবায়, মরণ, আশার ব্যতিক্রম
একটি আলোর মতো বিচ্ছুরিত-
সেই সব অতিক্রম ক’রে চ’লে যাই।