তবুও যখন মৃত্যু হবে উপস্থিত

তবুও যখন মৃত্যু হবে উপস্থিত
গাঢ় নীলিমার নিচে- জাফরান রৌদ্রের ভিতর
আর একটি প্রভাতের হয়তো-বা অন্যতর বিস্তীর্ণতায়
মনে হবে
অনেক প্রতীক্ষা মোরা ক’রে গেছি পৃথিবীতে
চোয়ালের মাংস ক্রমে শীর্ণ ক’রে-
কোনও এক বিশীর্ণ কাকের অক্ষিগোলকের সাথে
যেন আঁখিতারকার সব সমাহার এক দেখে
মনে এক সৌম্য তামাশার ক্ষুণ্ন শিহরন অনুভব ক’রে।
মাঝে-মাঝে পালাতে চেয়েছি কোনও কল্পনার স্বর্গলোকে নয়
কোনও-কোনও নদীদের তীরে- গোধূমের খেতে নয়
উদ্দাম ঘোড়ায় চ’ড়ে স্বপনের কোনও দূর সমুদ্রের পারে নয়;
তবু লঘু হাস্যে- সন্তানের জন্ম দিয়ে
তারা আমাদের মতো হবে- সেই কথা জেনে- ভুলে গিয়ে-
শিশুরে দীপের মতো নর্দামার পায়ের নীলিমায় নিভে যেতে দেখে
তারে মৃত্যু ব’লে অস্বীকার ক’রে
আমরা দিনের বেলা দল বেঁধে গুমোটের নিদ্রায় গড়ায়েছি
মারাত্মক মরুভূর হাত থেকে এক বার উল্লম্বিত হয়ে
অন্ধকার অজানিত জতুগৃহে খানিকটা শীতলতা ভেবে
খানিকটা নিরাপদ শান্তি আছে হয়তো-বা নির্জন নাসিকা দিয়ে অনুভব ক’রে
কোনও এক ভিখারিনি রমণীর সন্ততির মতো একে-একে দগ্ধ হয়ে তার পর
তবু গন্ধকের মতো ঘুম আগুন-রঙিন দিন ঘিরে চাহিয়াছি
আবার নারীর কোলে জন্ম নিয়ে- কোনও খাদে- খনির তিমিরে।
আমরা রাতের বেলা দল বেঁধে বন্দরের গুদামের নিদ্রায় গড়ায়েছি।
পৃথিবীতে আর কোনও কাজ নেই- কোনও দিন জাগিব না আর
রাতের হাওয়ার মতো সুন্দর আশ্বাস এই
জন্ম ঘর্ম মৈথুনের ব্যস্ততায় ভুলে গিয়ে
লোল হাস্যে জলের তরঙ্গ মোরা শুনে গেছি আমাদের প্রাণের ভিতর
নব শিকড়ের স্বাদ অনুভব ক’রে গেছি ভোরের অগ্নিবর্ণ হিরা’র রৌদ্রে
ঘনিষ্ঠ সূর্যের নিচে অনেক গন্ধর্ব, নাগ, কুকুর, কিন্নর, পঙ্গপাল
বহুবিধ জন্তুর কপাল
উন্মোচিত হয়ে বিরুদ্ধে দাঁড়ায়ে থাকে পথে-পথান্তরে
তবু ঐ নীলিমারে প্রিয় অভিভাবিকার মতো মনে হয় মুহূর্তের রোমহর্ষে
হাতে তার তুলাদণ্ড,-
শান্ত স্থির মুখের প্রতিজ্ঞাপাশে ললাটের নাতিকৃষ্ণ নির্জনতা ছাড়া কিছু নেই
যেন তার কাছে জীবনের অভ্যুদয়
মধ্যসমুদ্রের ‘পরে অনুকূল বাতাসের প্ররোচনাময়
কোনও এক ক্রীড়া- ক্রীড়া-
বেরিনমণি’র মতো তরঙ্গের উজ্জ্বল আঘাতে মৃত্যু।
স্থির- শুভ্র- নৈসর্গিক কথা বলিবার অবসর।