উঁচু এক প্রাসাদের জানালায়

কবে যেন উঁচু এক প্রাসাদের জানালায় ব’সে
করেছি বীক্ষণ আমি সুদূরের নদী
আঁধার বিস্ময়ে নিয়ে ভাবিয়াছি কোন দিকে কবে সে-উদধি
স’রে গেছে
পৃথিবী: খাবার এনে দিয়ে গেছে- বায়বীয়
উঁচু মোম জ্বেলে আমি করেছি প্রবেশ
গত তিন সহস্র বছর যত অন্ধকার পাণ্ডুলিপি রেখে গেছে
সেই সব দেশে
কুকুর কেঁদেছে নিচে চাঁদ দেখে
হয়তো-বা কারও রূঢ় পিতৃলোক থেকে শক্রযান-ছায়া এসেছিল
দীর্ঘ দীর্ঘতর ঐ ছায়াযান ছুঁয়ে বহু ক্ষণ
কী সব নিগূঢ় কথা বিবেচনা ক’রে
তার পর বোরোবুদুরের দিকে উড়ে গেল
ধূসর চন্দনকাঠে সৃষ্ট এক অতিকায় বিহঙ্গের মতো
তখন আকাশে চাঁদ নিশীথের সূর্যের মতন;
হাঁস-দম্পতির চোখের কোমল মোম- পুতুলের ভিড়ে
নরম আকাঙ্ক্ষা যেন নীরবে জাগাতেছিল
গ্রামিক বালার মতো আধাে-লোভে- আধাে-প্রেমে- দুষ্টু তামাশায়
চতুর হাসিটি তার কবরীর চুল ফুঁড়ে দু’টো কান বার ক’রে দিতেছিল
যেন মেষশাবকের শিঙের মতন
হঠাৎ দেখিল তারা ধবল চোগার এক দীর্ঘ প্রেতকায়া
কাত হয়ে ডান কনুইয়ের ভর- বড়ো নীল আকাশের পালঙ্কের ‘পর রেখে
যেন এক গাঢ় সাদা মশারির অন্তরালে লুপ্ত সম্রাটের মতো
যেন এক শুকতারকার মধ্যাকর্ষণের টানে ঊর্ধ্বে উঠিতেছে-

এই সব স্বপ্ন- স্বপ্ন-
মায়াবীর মিনারে থাকি নি আমি কোনও দিন
চির-দিন নগরীর মৃত্তিকার নিচে সুড়ঙ্গের শব্দ শুনে
আমি তার নাম আর দেব না ক’ নদী
চারি-দিকে বাজারের কোলাহল, সুশৃঙ্খল গড়ের ড্রিল
সহসা আতঙ্ক নিয়ে সুদূরের অন্ধকার নির্জন উদধি
কাছে আসে না ক’ আর
যেন তীক্ষ্ণ চকিত ধূসরের পরের মলিন।

যেন দীৰ্ণ প্রেত আমি দেখি না ক’ আর
ইহুদি-নাকের মতো জ্যামিতিক ভয়ঙ্কর ধবল জোব্বার
স্থলের নাবিক আমি চির-দিন
দুই দণ্ড হাঁটিতেই রাস্তা শেষ হয়ে যায়
গন্তব্যেরা ব’লে দেয় ‘এইখানে- এইখানে আছে।’
ট্রাফিক-পুলিশ হাত নামাতেই
কর্ণধার পেয়ে গেল যেন নব সমুদ্রের অন্ধকার ঘাঁটি
কোটি টন মীমাংসার মাংসস্তূপ চারি-দিকে
কেউ প্রশ্ন করেছিল বহু দিন?
ভয়ানক ব্যস্ত তারা আজ শুধু ফোটো তুলে- অটোগ্রাফ-দস্তখত লিখে।