উপলব্ধি

যা পেয়েছি সে সবের চেয়ে আরও স্থির দিন পৃথিবীতে আসে;
আসে না কি?
চারি-দিকে হিংসা দ্বেষ কলহ রয়েছে;
সময়ের হাত এসে সে সবের অমলিন, মলিন প্রেরণা
তবুও তো মুছে দিয়ে যেতে পারে,- ভাবি।

সেই আদিকাল থেকে আজকের মুহূর্ত অবধি
মানুষের কাহিনীর যতদূর অগ্রসর হয়ে গেছে তাতে
প্রান্তে ঠেকে দেখেছি কেবলই:
মলিন বালির দান নিয়ে তার মরুভূমি সূর্যের কিরণে দাঁড়াতে
শিখেছে অনেক দিন;
শিখেছিল- দেখেছিল অনাদির সরীসৃপদের রণ
কেলি কাম বিচরণ-
যুগে-যুগে ক্ষুধা লোভ-লালসার হানাহানি
অপমৃত্যু অন্ধকার স’য়ে
মাঝে-মাঝে দিগন্তের আজ পূর্ণা মরীচিকা হয়ে
জলের রেখার মতো বুদ্বুদে হারাতে শিখেছিল-
তবুও তো
মানুষের কাছে মানুষের দাবী র’য়ে গেছে মনে ভেবে হৃদয়ে কুয়াশা
করুণ প্রশ্নের মতো খেলা ক’রে গেছে ঢের দিন।
আমাদের পায়ে চলা পথ ঘিরে অব্যক্ত ব্যথার
কবেকার নচিকেতা- আজকের মানুষের হাড়
প্রাণের সমুদ্রে সুরে ফেনশীর্ষ ঢেউয়ের উপরে
সূর্যের দিগন্তে দেশে আমাদের তুলে নিতে চায়;
নিঃসহায় ডুবুরির মতো ডুবে মরে;
সমুদ্রপাখির সাদা, বিরহীর মতন ডানায়
সেই শূন্য অন্ধকার দিকের ভিতরে
আমাদের ইতিহাস পিরামিড ভেঙে ফেলে;-
লন্ডন-ক্রেমলিন গড়ে।

কেবলই আশঙ্কা, ব্যথা, নিরাশার সম্মুখীন হয়ে
মানুষের মরণের সমুদ্রের ঢেউ
রূপান্তরিত ক’রে নিতে চেয়ে মানুষের জীবনের সুর
জেনেছে কোথাও ভয় নেই- নেই- নেই।
তবুও কোথাও ধর্মমন্দিরের অভয়পাণির সফলতা
আবার ভোরের সূর্যে সমুখে রবে না কোনও দিন।

কবের প্রথম অবপ্রাণনায় জেগে
সাদা পাতা খুলেছিল যারা,
গল্প লিখে গিয়েছিল ঢের,
আদি রৌদ্র দেখেছিল,
সিন্ধুর কল্লোল শুনে গিয়েছিল ঢের, দিয়ে গিয়েছিল:
আকাশের মুখোমুখি অন্য এক আকাশের মতো যারা নীল হয়ে
রাত্রি হয়ে নক্ষত্রের মতো হয়ে মিশে গিয়েছিল;
তারা আর তাদের মরণ আজ আমাদের
পায়ের পথের নীচে যতদূর ভুল
তাহাদের অস্তসূর্য ততদূর আমাদের উদয়ের মতন অরুণ;
শ্বেতাশ্বতর থেকে দীপঙ্কর অবধি সবই সাদা স্বাভাবিক
মনে হয় ব’লে মৃত স্বভাবের মতন করুণ।
বিকেলের ক্ষয়ের ভিতরে এসে আজ তবে আমাদের দিন
অনিবার ইতিহাস অঙ্গারের প্রতিভাকে সঞ্চয়ের মতো মনে ভেবে
মরণকে যা দেবার- জীবনকে যা দেবার সব
কঠিন উৎসবে- দীন অন্তঃকরণে দিয়ে দেবে।

উত্তরসূরি । পৌষ-ফাল্গুন ১৩৬১