কথোপকথন ২

নন্দিনী
শুভঙ্কর, স্পষ্ট করে বলো
কার ছুরি, কোন ছুরি বিধেছে পাঁজরে।

প্রথম কদম ফুল যেদিন তোমার কাছে আমি
অথবা আমার কাছে যেদিন তুমিই হলে নক্ষত্র-নাবিক
তখন থেকেই জানি নানা প্রশ্নে ছিন্নভিন্ন ছিলে।
কিন্তু কোনদিন
রুমালে রক্তের দাগ মুছতে মুছতে কথা বলে যাবে
সে দৃশ্যকে স্বপ্নেও আঁকি নি।

লক্ষ্মী শুভঙ্কর, প্লিজ, বলো।
যে তোমাকে শরীরের সমস্ত পলাশ ফুল উপড়ে দিয়েছে
তাকেও লুকোবে অন্তর্ঘাত?

শুভঙ্কর
আমাকে নিংড়ে নিচ্ছে যে ধস, যে খুন, ছারখার
সেই ধ্বংসমূল আমি চেনাব কি করে?
তারা তো হিটলার নয়, মুসোলিনী কিংবা ফ্রাঙ্কো নয়,
আঙুল দেখিয়ে বলব, ঐ যে ঘাতক।

গভীর অদৃশ্য থেকে বাঁকে বাঁকে নিঃশব্দ তর্জনী
মানবযাত্রার গতি নিয়ন্ত্রিত করে মানুষের
সমাজ প্রতিভা ভেঙে তাকে যে কীভাবে
কয়লার টুকরোর মতো ছুঁড়ে দিচ্ছে আগ্নেয় বয়লারে
কী করে বোঝাব, তুমি বুঝবে কি করে?

নন্দিনী
বুঝি বা না বুঝি তবু বলো।
আমি কী এতই মূর্খ রক্তের ক্রন্দনও চিনব না?

শুভঙ্কর
সব ত্রিভুজেরই এক শীর্ষচূড়া থাকে।
পাহাড়ের যেমন শিখর।
মনীষার, মগ্ন উচ্চারণ।
কোথায় সে রশ্মিকণা, যাকে জুড়ে বানাব নিজের
গন্তব্যের সিঁড়ি, ঊর্ধরেখা?

তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ সমুদ্রযাত্রার অঙ্গীকার
ভুলে গিয়ে সব ঢেউ এখন কেবলই খুঁজে চলেছে নির্বিঘ্ন সমতল।
আছড়ে পড়ছে হাওয়া এক, ভীষণ অচেনা এক হাওয়া,
এমন বিধ্বংসী হাওয়া আগে আমি দেখি নি কখনো।
কোন রঙ নেই তবু উন্মাদক রঙের উল্লাসে।
ভেসে যাচ্ছে মানুষের আসল আদল, মৌলরূপ।

নন্দিনী
সনির্বন্ধ অনুরোধ শুনবে কি আমার?
দৈনন্দিনতা থেকে সরে এসে প্রান্তরে দাঁড়াও
এমন প্রান্তর যার প্রান্তরেখা আকাশও জানে না।
পাথরে ভাস্কর্য পাবে, রাজধিরাজের তুল্য পাহাড়কে পাবে
বিচক্ষণ অরণ্যের বৃক্ষসারি পাবে।
বিবাহরাত্রির মতো আলোকসজ্জাকে পাবে চারণভূমিতে।
অন্ধকার রাত্রে পাবে অলৌকিক নক্ষত্র-সংকেত।
সেখানেই রয়ে গেছে মহেনজোদারোর ন্যায় অজ্ঞাত লিপির নির্দেশনা।
আমি চাই, তুমি সেই শিলালিপি আবিষ্কার করো।