একাল ও সেকাল

বর্ষা এলায়েছে তার মেঘময় বেণী-
গাঢ় ছায়া সারাদিন,
মধ্যাহ্ন তপনহীন,
দেখায় শ্যামলতর শ্যাম বনশ্রেণী।

আজিকে এমন দিনে শুধু পড়ে মনে
সেই দিবা-অভিসার
পাগলিনী রাধিকার,
না জানি সে কবেকার দূর বৃন্দাবনে।

সেদিনও এমনি বায়ু রহিয়া রহিয়া-
এমনি অশ্রান্ত বৃষ্টি,
তড়িত-চকিত দৃষ্টি,
এমনি কাতর হয়ে রমণীর হিয়া।
বিরহিণী মর্মে-মরা মেঘমন্দ্র স্বরে-
নয়নে নিমেষ নাহি,
গগনে রহিত চাহি,
আঁকিত প্রাণের আশা জলদের স্তরে।

চাহিত পথিকবধূ শূন্যপথপানে-
মল্লার গাহিত কারা,
ঝরিত বরষাধারা,
নিতান্ত বাজিত গিয়া কাতর পরানে।
যক্ষনারী বীণা কোলে ভূমিতে বিলীন-
বক্ষে পড়ে রুক্ষ কেশ,
অযত্নশিথিল বেশ,
সেদিনও এমনিতরো অন্ধকার দিন।

সেই কদম্বের মূল, যমুনার তীর,
সেই সে শিখীর নৃত্য
এখনো হরিছে চিত্ত-
ফেলিছে বিরহছায়া শ্রাবণতিমির।

আজও আছে বৃন্দাবন মানবের মনে-
শরতের পূর্ণিমায়
শ্রাবণের বরিষায়
উঠে বিরহের গাথা বনে উপবনে।

এখনো সে বাঁশি বাজে যমুনার তীরে-
এখনো প্রেমের খেলা
সারা নিশি সারা বেলা,
এখনো কাঁদিছে রাখা হৃদয়কুটিরে।

[২১ বৈশাখ ১৮৮৮]