মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহনরাত্রিকালে

মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহন রাত্রিকালে
ঐ যে আমার নেয়ে।
ঝড় বয়েছে, ঝড়ের হাওয়া লাগিয়ে দিয়ে পালে
আস্ছে তরী বেয়ে।
কালো রাতের কালি-ঢালা ভয়ের বিষম বিষে
আকাশ যেন মূর্চ্ছি’ পড়ে সাগরসাথে মিশে,
উতল ঢেউয়ের দল ক্ষেপেছে, না পায় তারা দিশে,
উধাও চলে ধেয়ে।
হেনকালে এ-দুর্দিনে ভাবল মনে কী সে
কূলছাড়া মোর নেয়ে?

এমন রাতে উদাস হ’য়ে কেমন অভিসারে
আসে আমার নেয়ে।
সাদা পালের চমক দিয়ে নিবিড় অন্ধকারে
আসছে তরী বেয়ে।
কোন্ ঘাটে যে ঠেকবে এসে কে জানে তার পাতি,
পথহারা কোন্ পথ দিয়ে সে আসবে রাতারাতি,
কোন অচেনা আঙিনাতে তারি পূজার বাতি
রয়েছে পথ চেয়ে?
অগৌরবার বাড়িয়ে গরব আপন সাথী
বিরহী মোর নেয়ে।

এই তুফানে এই তিমিরে খোঁজে কেমন খোঁজা
বিবাগী মোর নেয়ে।
নাহি জানি পুর্ণ ক’রে কোন্ রতনের বোঝা
আসছে তরী বেয়ে?
নহে নহে, নাইকো মানিক, নাই রতনের ভার,
একটি ফুলের গুচ্ছ আছে রজনীগন্ধার,
সেইটি হাতে আঁধার রাতে সাগর হবে পার
আনমনে গান গেয়ে।
কার গলাতে নবীন প্রাতে পরিয়ে দেবে হার
নবীন আমার নেয়ে?

সে থাকে এক পথের পাশে, অদিনে যার তরে
বাহির হ’ল নেয়ে?
তারি লাগি পাড়ি দিয়ে সবার অগোচরে
আস্ছে তরী বেয়ে।
রুক্ষ অলক উড়ে পড়ে, সিক্ত-পলক আঁখি,
ভাঙা ভিতের ফাঁক দিয়ে তা’র বাতাস চলে হাঁকি,
দীপের আলো বাদল-বায়ে কাঁপ্ছে থাকি’ থাকি’
ছায়াতে ঘর ছেয়ে।
তোমরা যাহার নাম জান না তাহারি নাম ডাকি
ওই যে আসে নেয়ে।

অনেক দেরি হ’য়ে গেছে বাহির হল কবে
উন্মনা মোর নেয়ে।
এখনো রাত হয় নি প্রভাত, অনেক দেরি হবে
আসতে তরী বেয়ে।
বাজ্বেনাকো তূরী ভেরী, জানবে্নাকো কেহ,
কেবল যাঁবে আঁধার কেটে, আলোয় ভরবে গেহ,
দৈন্য যে তার ধন্য হ’বে, পুণ্য হবে দেহ
পুলক-পরশ পেয়ে
নীরবে তা’র চিরদিনের ঘুচিবে সন্দেহ
কূলে আসবে নেয়ে।।

কলিকাতা
৫ ভাদ্র, ১৩২১