মুক্তি

জয় করেছিনু মন তাহা বুঝে নাই,
চলে গেনু তাই
নতশিরে।
মনে ক্ষীণ আশা ছিল ডাকিবে সে ফিরে।
মানিল না হার,
আমারে করিল অস্বীকার।
বাহিরে রহিনু খাড়া
কিছুকাল, না পেলেম সাড়া।
তোরণদ্বারের কাছে
চাঁপাগাছে
দক্ষিণে বাতাস থরথরি
অন্ধকারে পাতাগুলি উঠিল মর্মরি।
দাঁড়ালেম পথপাশে,
ঊর্ধ্বে বাতায়ন-পানে তাকালেম ব্যর্থ কী আশ্বাসে।
দেখিনু নিবানো বাতি-
আত্মগুপ্ত অহংকৃত রাতি
কক্ষ হতে পথিকেরে হানিছে ভ্রূকুটি।

এ কথা ভাবি নি মনে, অন্ধকারে ভূমিতলে লুটি
হয়তো সে করিতেছে খান্ খান্
তীব্রঘাতে আপনার অভিমান।
দূর হতে দূরে গেনু সরে
প্রত্যাখ্যানলাঞ্ছনার বোঝা বক্ষে ধরে।
চরের বালুকা ঠেকা
পরিত্যক্ত তরীসম রহিল সে একা।

আশ্বিনের ভোরবেলা চেয়ে দেখি পথে যেতে যেতে
ক্ষীণ কুয়াশায় ঢাকা কচিধানখেতে
দাঁড়িয়ে রয়েছে বক,
দিগন্তে মেঘের গুচ্ছে দুলিয়াছে উষার অলক।
সহসা উঠিল বলি হৃদয় আমার,
দেখিলাম যাহা দেখিবার
নির্মল আলোকে
মোহমুক্ত চোখে।
কামনার যে পিঞ্জরে শান্তিহীন
অবরুদ্ধ ছিনু এতদিন
নিষ্ঠুর আঘাতে তার
ভেঙে গেছে দ্বার-
নিরন্তর আকাঙক্ষার এসেছি বাহিরে
সীমাহীন বৈরাগ্যের তীরে।
আপনারে শীর্ণ করি
দিবসশর্বরী
ছিনু জাগি
মুষ্টিভিক্ষা লাগি।
উন্মুক্ত বাতাসে
খাঁচার পাখির গান ছাড়া আজি পেয়েছে আকাশে।

সহসা দেখিনু প্রাতে
যে আমারে মুক্তি দিল আপনার হাতে
সে আজও রয়েছে পড়ি
আমারি সে ভেঙে-পড়া পিঞ্জর আঁকড়ি।

শান্তিনিকেতন
২০ ভাদ্র, ১৩৪২