সন্ধ্যা

চলেছিল সারা প্রহর
আমায় নিয়ে দূরে
যাত্রী বোঝাই দিনের নৌকো
অনেক ঘাটে ঘুরে।
দূর কেবলি বেড়ে ওঠে
সামনে যতই চাই,
অন্ত যে তার নাই।
দূর ছড়িয়ে রইল দিকে দিকে,
আকাশ থেকে দূর চেয়ে রয় নির্নিমিখে।
দিনের রৌদ্রে বাজতে থাকে
যাত্রাপথের সুর,
অনেক দূর যে অনেক অনেক দূর।
ওগো সন্ধ্যা শেষ প্রহরের নেয়ে,
ভাসাও খেয়া ভাঁটার গঙ্গা বেয়ে
পৌঁছিয়ে দাও কূলে,
যেথায় আছ অতি-কাছের
দুয়ারখানি খুলে।
ঐ যে তোমার সন্ধ্যাতারা
মনকে ছুঁয়ে আছে,
ছায়ায় ঢাকা আমলকি বন
এগিয়ে এল কাছে।

দিনের আলো সবার আলো
লাগিয়েছিল ধাঁদা,-
অনেক সেথায় নিবিড় হয়ে
দিল অনেক বাধা।
নানান-কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে
হারানো আর পাওয়ায়
নানানদিকে ধাওয়ায়।
সন্ধ্যা ওগো কাছের তুমি,
ঘনিয়ে এসো প্রাণে,-
আমার মধ্যে তারে জাগাও
কেউ যারে না জানে।

ধীরে ধীরে দাও আঙিনায় আনি
একলারি দীপখানি,
মুখোমুখি চাওয়ার সে দীপ,
কাছাকাছি বসার,
অতি-দেখার আবরণটি খসার।
সব-কিছুরে সরিয়ে, করো
একটু-কিছুর ঠাঁই-
যার চেয়ে আর নাই।।

শান্তিনিকেতন
২৩।৪।১৯৩৭