নির্লিপ্ত

হৃদয়ের গহন নীড়ে
নয়ন যমুনা তীরে
কোনদিন পেয়েছ কি মোর,
মোর ছবিখানা
আঁকিয়াছ কি কভু স্বপন ঘোরে!
গাহিয়াছ কভু মোর গান
সহসা ব্যাকুল প্রানে
জাগিয়াছ নিশিথ বেলা,
আবেগে গাঁথিয়াছ কি মিলন মালা!
কোনদিন কোন চাঁদনী রাতে,
যবে হাসিয়াছে ধরনী আলোক সাথে,
একেলা নিরজনে অনুক্ষন আনমনে
ভাবিয়াছ কি মোর কথা,
উচ্ছল হয়েছে কি পুঞ্জিত ব্যথা!
মরম সরসী নীরে
মানসী নলিনী ঘিরে
হাসিয়াছে শিশির মুকুর,
যমুনার হিল্লোলে সলিল কল্লোলে
স্মৃতিবীনা সুমধুর।
কভু কি কোন ক্লান্ত গোধুলি শেষে,
জানিয়েছ সান্ত্বনা হেসে?
কভু কি মুছায়েছ আঁখিজল?
পরায়েছ কন্ঠে ফুল; অবশেষ যার ভুল
ঝরা শিশিরে বনতল।
আমি কি তোমার সেই পথিক কবি,
আঁকিয়াছে হৃদে যেগো স্বপন ছবি?
কুয়াশার ছলনায়
সহিছে সবি ওগো নিরব ব্যথায়।

কত ছল আঁখিজল, কত ফুল দল
কতো সরসী নির্মল।
হাসিয়া করিয়া গিয়াছে কাঁদিয়া,
ফাগুন ফিরিয়া গেছে বৃথা সুর সাধিয়া।
পরাতে পারিনি মালা
কন্ঠে তাদের হেসে,
তুমি কাঁদিয়াছ মোরে ভালবেসে।
জ্বালায়ে লয়েছ বুকে অনল পাষান,
শ্যামল শোভা ভরা জীবনের তীর
হয়েছে মরুময় শশ্মান।

প্রদীপশিখায় সঁপিয়া আপনি
অঙ্গার হয়ে শেষে,
তুমি পুড়িয়াছ মোরে ভালবেসে।
তোমার দগ্ধ হৃদয়
সকল হারান ব্যথায়
জ্বলিছে অনুক্ষন ধরি,
ব্যথার কল্লোলমালা
কাঁদিছে তোমায় ঘিরি।

আমি তোমায় পারিনি কিছুই দিতে,
বুকের গহনে বাঁধিয়া নিতে।
ক্ষমা করো সখি মোরে,
প্রার্থনা মোর রেখে গেনু তব দ্বারে।
উজ্জল করি সাজায়ে পরিপাটি
নাহি প্রয়োজন এ মোর বাটি
রূপরসে মাধুরী ভরাবার।
দুরন্ত আমার মুক্ত পারাবার।
তটিনীর তীরে বসি কোন দিন,
বিস্মৃতি মাঝে ডুবে যেতে লীন-
মোর গানের প্রসাধ স্ম’রে
কেঁদো না। ভুলে যেও মোরে
চির জনমের তরে।

২রা বৈশাখ, ১৩৭৯, লালবাগ, ঢাকা।