কয়েকটি দিন

নদীর জলে
শৈশবে দেখেছি গলিত উলঙ্গ শব।
রক্তিম প্রাণ গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া গাছে আসে;
আজ শহর হতে বহুদূরে, শালবনের পথে
বালুতে অতিক্রান্ত দিনরাত্রির ভগ্নস্তুপ,
বিকেলে কাঁকরে রুক্ষ দিগন্তবিত লাল সৌন্দর্য,
বন্ধুর মাঠে সন্ধ্যায় শেয়াল, কোকিল ডাকে
তারপর এই কর্কশ বালুতে, এই রক্তপথে
আকাশের নিবিড় নীল আগুন লাগল।
নরম মাংসস্তুপে গভীর চিহ্ন এঁকে
নববর্ষের নাগর চলে গেল রিক্তপথে,
বন্ধ্যা নারীর অন্ধকারে পৃথিবীকে রেখে।
দীর্ঘ দিনে করাল রৌদ্র নির্মম ঐশ্বর্য বিলায়,
উপরে ধূর্ত কাকের ভিড়,
গরুর গাড়ির ছায়ার পিছনে
স্খলিতগতি ভ্রান্ত কুকুর ঘােরে।
ধাবমান কাল
ট্রেনের লৌহরেখার উপরে আজো আনে লােহিত-হলুদ চাঁদ,
সন্ধ্যার দিকে তপ্ত আবেগে
স্নিগ্ধ ঘনমেঘে আকাশ শান্ত গম্ভীর।

দিন যায়, বসন্তু গতপর বহুদিন,
গ্রামে গ্রামে মাঘমাসে দীর্ঘদেহ কাবুলিরা আসে,
ঘুরে-ফিরে হানা দেয় ঘরে ঘরে,
বর্বর ভাষায় কাঁচাপাকা দাড়ি হাওয়ায় নড়ে।

চায়ের দোকানে বিনষ্ট দল,
শুধু মনান্তরের কর্কশ কোলাহল।

আজ শুধু মনে হয়,
ক্ষুধিত স্বেদাক্ত মুখের উপরে টর্চের লাল আলাের পর,
পাথর-কঠিন যুগে যন্ত্রণার
আর পৃথিবীতে পুঞ্জীভূত শতাব্দীর স্তব্ধতার পর
সমুদ্রের শব্দের মতাে শেষহীন ব্ৰজ্বের গুরু গুরু প্রতিধ্বনি।

মড়কের কলরােল, নতুন শিশুর কান্না,
চিরকাল বেলাভূমির সমুদ্রের শেষহীন সঙ্গম!
অতীতের শবসম্ভোগী মন
কালের স্থবির যাত্রায় স্থির অশান্তি আনে।
আজ দুঃস্বপ্নে দেখি,
বৃদ্ধ শিশু আর বুদ্ধিহীন বৃদ্ধের দল
স্খলিত দাঁতের ফাঁকে কাঁদে আর হাসে
ট্রামে আর বাসে;
দূরে পশ্চিমে
বিপুল আসন্ন মেঘে অন্ধকার স্তব্ধ নদী।