আলোর তোড়া

(প্রেসিডেন্সী কলেজের ছাত্রদের পক্ষ হইতে ডাক্তার জগদীশচন্দ্রকে
একটি আরতির দীপ-বৃক্ষক দেওয়া হইয়াছে; উহার সমস্ত দীপগুলি
জ্বালিলে আলোর তোড়ার মতন দেখায়।)

-আলোর তোড়া বাঁধছ কারা চাঁপার কলি দীপশিখায়
এমন তোড় তোমরা সবাই যাচ্ছ দিতে হায় গো কা’য়?
শিল্পী হিয়ার কল্পলতার এ যে গো ফুল প্রফুল্ল!
ভাবের মূর্ত্তি!- ভাবুক বিনা বুঝবে ইহার কে মূল্য?
ফুলের তোড়া সবাই নেবে, আলোর তোড়ে ধরবে কে?
-জ্ঞানের অমল দীপ্তিতে যার সকল আঁধার হরবে রে!
হরবে আঁধার ভরবে আলোয় চার মহাদেশ দশ দিশা
সিন্ধুপায়ী অগস্ত্যেরি মতন যাহার জ্ঞানতৃষা;
গরুড় সম পিয়ে যে জন, প্রাবৃট সম পিয়ায় গো,
সেই নেবে এ আলোর তোড়া জড়কে যে জন জীয়ায় গো।
-এমন মানুষ মিলবে কোথায়?
-আছে মোদের সঙ্গে সে
তেমন মানুষ বিধির কৃপায় জন্মেছে এই বঙ্গেতে!
খণ্ড জ্ঞানের গণ্ডগোলে কভু না যার ধ্যান টুটে,-
পূর্ণ জানার পরশমণি বিরাজ করে যার মুঠে,-
জ্ঞান-ভুবনের জ্যোতিষ্ক সব যার আরতির দীপ জ্বালে,
জ্ঞানের যজ্ঞে শেষ যে টীকা সেই টীকা আজ যার ভালে,
দীপ্ত আঁখির দীপান্বিতা চলন্-পথে যার নিতি
সোনায় মোড়া আলোর তোড়া গাইছে তারি জয়গীতি,
দেশের আকাশ রাঙিয়েছে যে ঘুম ভাঙানো কুঙ্কুমে
আলোর ধ্বজা উঠিয়েছে যে চির-ঘুমের এই ভূমে,
তারি হাতে সাজ্তে পারে বিশ্বপ্রাণের স্ফূর্ত্তি এ
এই অনুপম আলোর তোড়া তার প্রাণেরি মূর্ত্তি এ।

এই অনিমিখ উর্ধ শিখা- এই যে সোনা স্পন্দমান
এই তত গুরুদক্ষিণা ঠিক- এই জাগরণ মূর্ত্তিমান।
শ্রুতির বাণী কেবল শুনে হয়নি খুসী, দ্রষ্টা সে
জীবন-জড়ে ঐক্য-হেতু নবীন-সেতু-স্রষ্টা সে;
সত্য সে যে চক্ষে হেরে স্পর্শ করে দুই হাতে
বিশ্ব হ’ল শিষ্য তাহার কখন্ তাহার অজ্ঞাতে!
প্রকাশ করা ধৰ্ম্ম এবং দীক্ষা তাহার আলোক রে
আলোর তোড়া প্রাপ্য তারি জ্ঞেয়ান-রথের চালক যে।
নিজের জ্ঞানের দীপটি দিয়ে কতই প্রাণের সুপ্ত দীপ
আলিয়েছে সে জাগিয়েছে গো পরিয়ে দেছে তারার টিপ,
তার প্রতিভার রশ্মি ঘিরে প্রতিভা সব ফুট্ছে গো,
বাংলা জুড়ে আলোর তোড়া আপ্নি বেঁধে উঠ্ছে গো;
সেই তোর এই প্রতিচ্ছবি, অগ্রদূত এ ভবিষ্যের,
প্রতিভূ এ অনাগত আলোর ভালোর এ বিশ্বের!