আমি কিছুই কিনবো না

ঢিলে-ঢালা হাওয়ায়-ফোলানো ট্রাউজার, বিপর্যস্ত চুলে
উৎসবে, জয়ধ্বনিতে আমি
ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে, বিজ্ঞাপনের লাল আলোয়
সতেজ পাতার রঙ সেই বিজয়ী পতাকার নীচে
কিছুক্ষণ, একা
নতুন, সোনালি পয়সার মতন দুই পকেট ভর্তি স্বপ্নের ঝনৎকার
আর জ্যোৎস্নার চকিত ঝলক আমার
ঝলসানো মুখের অবয়বে
সিনেমায় দীর্ঘ কিউ-এর-সামনে আমি
নব্য দম্পতির গা ঘেঁষে

চারিদিকে রঙবেরঙের জামা-কাপড়ের দোকান
মদিরার চেয়ে মধুর সব টেরিলিনের শার্ট
ভোরবেলার স্বপ্নের চেয়ে মিহি সূক্ষ্ম সুতোর গেঞ্জি
স্বপ্নাক্রান্ত বালকের হাতেরও অধিক অস্থির
রজ্জুতে-গাঁথা রাশি রাশি, পুঞ্জ পুঞ্জ লাল, নীল উজ্জ্বল রুমাল
মেঘলোকে মজ্জমান রেস্তোরাঁর দ্বারগুলো খোলা-
আমি অবহেলে চলে যাবো, যাই
আঁধার রাস্তার রানী চকোরীর মত বাঁকা চোখে দ্যাখে
-আমি কিছুই কিনবো না!

নিরন্তর গাড়িগুলো পার্ক-করা নির্দিষ্ট রাস্তার বাঁকে
সিনেমার কিউ ধ’রে অনন্তকাল আমি
আমার ইয়ার্কি আর মস্কারা
ইন্দ্রধনু রঙের সরু বেল্ট নিয়ে অফুরন্ত দরাদরি
-আমি কিছুই কিনবো না।

আমাকে পেছনে রেখে চলে যায় সারে-সারে কত ক্লার্ক
আঙুলে কালির দাগ, মুখে ভয়
টাইপরাইটারে ছাওয়া সারা দেশ, কি মুখর, উন্মুখর
কত না রঙ্গ জানে শো-কেসের সাজানো শেমিজ, শাড়ি
ঝলমলে ছোটবড় ঘড়ি
তিনজন অন্ধবুড়ো জ্যোৎস্নাভরা মাঠে কী কৌতুকে
গালমন্দ পাড়ে
গান ধরে অন্ধকার গলি, ‘হে প্রেম, হে আমার প্রেম।’
পার্কের রেলিঙে বসে-থাকা বধির পাগলের অট্টহাসিতে
ধ্বংসের খরতাল বুঝি বাজে
তবু ম্লান আলোর নীচে দীপ্তিমান জ্বলজ্বলে কমলা
আর আপেলের ঝুড়ি
আর আমার পকেটভর্তি স্বপ্নের ঝনৎকার
জয়ধ্বনি থেকে ক্রন্দনে আমি
উদ্ধত পতাকার নীচে একা, জড়োসড়ো-
-আমি কিছুই কিনবো না।