নির্বাণ

রাস্তার ধারে সে ফুলছে, বাচাল বসন্তের অধিরাজ,
পিচ্ছিল পোকাগুলো তার হা-করা চোখের
চুইয়ে পড়া রসে ঘুরছে, কী মসৃণ!

ঢের অলি-গলি মাড়িয়ে সে আপন
একাধিপত্যে মাননীয় ছিল সব গৃহস্থের ঘরে।
গুণীর মত তার গলার সামান্য কসরৎ
সহজে লাগাতো তাক : মৃদু একটু গরর
ত্রস্ত সবাই তারে পথ ছেড়ে দিতো,
এবং সে বিজয়ী রাজার মত পায়ের অরণ্য ঠেলে
বেরিয়ে আসতো এই বড় রাস্তার ধারে।

বড় রাস্তা, -যেখানে নশ্বর সব মেলায়-মেলায়
চকিত উদ্ভাসে হল্লা-জেল্লা, মুখ, যান-
তাকে সে এড়িয়ে চলেছে চিরকাল; কেননা সেখানে তার
অস্তিত্ব শুধু একরাশ অস্বস্তির স্তূপ!

কখনও সে বৃত্ত ছেড়ে যায় নি কোথাও
এবং অলৌকিক বাসনায় ঘুরেছে চরকির মত
নিজেরই বঙ্কিম, ঋজু লেজের পেছনে।
এমনকি মাঝে-মাঝে এক একটা সুডৌল দিন
ঘুরতে ঘুরতে কেটেছে কী দুরাশায়,
নিজেকে করেছে সে ধাওয়া।

কিন্তু সে আশ্চর্য ফুর্তিবাজও ছিল,
রঙিন বলের সঙ্গে তার উল্লাস
আনন্দে ভরে তুলতে সারা পাড়া
এবং তার উদ্ধত গলা-ফোলা গর্বের ভারে
আমরা সব নোয়াতাম মাথা।

সারাটা বসন্তকাল সে জ্বলতো শিখার মত,
আর ফুল না ফুটলেও অন্তত তার লালা
চরাচর সিক্ত ক’রে তীব্র কামনার মদে
ডুবিয়ে দিয়েছে সব; সে বিশাল আঁধারে
একান্ত নির্ভর ছিল মাতাল আশ্লেষ:
দৃশ্যমান অনন্য পাল।

এখন সে নির্মোহ, পড়ে আছে একধারে, চুপ।
ফুলে গেছে জল-ভরা মশকের মতো:
মন্মথ সুহৃৎ তারে সুড়সুড়ি দিলেও
তেমনি সে পড়ে থাকে একলা, উদাস
সীমার বাইরে অধিরাজ।

এবং চোখের মণিতে তার পড়েছে ধরা
নির্বিকার চিরন্তন, -থেমে আছে অপরূপ
বিশাল, বাসন্তী আকাশ সন্ধ্যার,-
গভীর ধ্যানীর মত মোহন, তন্ময়!