সমকালীন জীবনদেবতার প্রতি

কবির নিঃসঙ্গতা নয়, প্রেমিকের নিঃসঙ্গতাও নয়,
কেননা গোলাপ কিংবা দয়িতার আসঙ্গে মরে না
জলোচ্ছ্বাসে নাচে না সে, বৃষ্টিতে ভেজে না, তবু যেন
আমারই কুটুম্ব কোন ভাবেসাবে পরম বান্ধব,
শূন্যতার অদ্ভুত আদল যেন দেখা-না-দেখায় মেশা
ঝুলে থাকে মাঝরাতে রেস্তোরাঁর কড়িকাঠ থেকে, –
বাদুড় না বেলুন বন্ধু, স্বপ্ন না হতাশায় ঠাসা?

ভোজনরসিক যদি, নাও তবে জ্বলজ্বলে আত্মাটিরে আমার।
তোমারই ত’ পরামর্শে আমি শুয়ে থাকি
যে বিছানায়, কবরের মত রুক্ষ আর ছোট তার প্রসার-

তবে কি দশ লক্ষ কৃমি তুমি? ধূর্ত কোন শেয়াল?
যখন থাকে না গাঁ-এর লোক, ঝোপের আড়ালে তুমি, তুমি-ই
ভবিষ্যৎ আমার দুটো লাল চোখ মেলে ওঁৎ পেতে থাকো,
হারে বিধি! যেমন কর্ম তার তেমনি নষ্ট ফল।

গীতে-বাদ্যে, ধ্বনিতে ওহে, তুমি নিলে যত উপচার
মহিলারা নেয় নি তত, কিন্তু তারা চেয়েছিল সহজ উদার
দুই হাতে তুলে দিতে সফেদ দুধের জামবাটি।

কিন্তু আজ অন্ত্রনালীতে ঘা, নির্ঘুম রাত্রিতে আমার,-
এই ত’ সখ্যতা তোমার দিগন্তে গেঁথে দিল শুধু
নির্বীজ কান্নার মত একফোঁটা চাঁদ, অনুধ্যানে যার
জোটে না মাধুরীকণা মনে হয় নিঃশেষিত সকল গেলাস।

আমি ত’ চাই নি কখনও পাঁচ শ’ সুন্দরী কিংবা হারেম,
ক্রীতদাস ক্রীতদাসী মনোরম রাজ্যপাট, গোপন বাগান
প্রোজ্জ্বল গালিচা আর মুক্তাখচিত কোন মখমল লেবাস
নেকাব সরিয়ে কোন ইহুদি রমণীর মুখ, দামী আসবাব

বরং কুঞ্চিত ভ্রু, বিরক্তি আর উৎকণ্ঠায় ভরা,
ভেবেছি তুমিই আমার পরম রমণীয় ঝাড়বাতি
রাশি রাশি সোনার মোহর ভর্তি রূপালি এক ঘড়া,
দেখা দেবে মাঝরাতে মন্ত্রে-তন্ত্রে ভরা চন্দ্রের মতন
অথবা বাড়াবে মুখ, উৎসুক জানালা বেয়ে সলাজ উদ্ভিদ।

একদা তুমিই ছিলে পৌষের প্রখর রাত্রে, ঝিল্লীর মুখরে
নর্মসহচরী, সুন্দরী, নিদ্রাহীন নন্দনের লীলাসঙ্গিনী,
আঁধারে ঘোমটার তলে কৌতুকে স্মিত-মুখ জীবন দেবতা,
ছিল না দন্তে ধার, ময়লা নখ, তামাটে দীর্ঘচুলে জটা
পেভমেন্টে ঠাণ্ডারাতে দংশনে আক্রান্ত কোন যুবকের মত
স্বপ্নের নির্মোকে পুরে দাও নি বন্ধু, হঠাৎ আর্তনাদ।