ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ে

জ্যোৎস্নায় কোথাও আচমকা ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ে।
ঘর আর থাকে না ঘরের
ভেতরের, দেয়ালগুলি হতাশার মতো পড়ে থাকে
ইতস্তত, বাস্তুসাপ চোরা
গর্তে ঢুকে অন্ধকারকেই
সমর্থন করে।
স্টেচারে সারল্য শুয়ে আছে, ব্যাণ্ডেজের অন্তরাল
থেকে প্রস্ফুটিত করুণার মুখ, অ্যাম্বুলেন্সে ঘোরে
স্টিয়ারিং আজরাইলের
হাতে, ভেঁপু বাজে বারবার। পথচারী
বিস্মিত দাঁড়ায় ঘুরে, পুরানো কাগজ
সংকীর্ণ, রাস্তার দীর্ঘশ্বাসে ওড়ে, ডাস্টবিন চাটে ধৈর্যশীল
কুকুর, ট্রাম্পেটে বাজে বিশ শতকের
একটানা ক্লান্ত অস্তরাগময় গহন পূরবী।

গ্রামীণ জমির আলে, হলুদের বিস্তৃত শোভায়,
ঝোপঝাড়ে সূর্যোদয়-ঝলসিত বিলে,
শহরের ফ্যাক্টরিতে, সিনেমায়, পার্কে, কলোনিতে, আদালতে
অথবা ট্রাফিক আইল্যান্ডে-
কোথায়ও নিশ্চিন্তি নেই। সেই কবে থেকে
হুলিয়া হয়েছে জারী পলাশের রঙের বিরুদ্ধে, কারাগারে
ঠেলে দেয়া হয়েছে যুবার
স্বপ্ন মঞ্জরীকে, কিশোরীর শুচিতাকে যুপকাটে
বলি দেয়া হচ্ছে প্রকাশ্যেই। স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার
প্রক্রিয়া বিষয়ে যারা
প্রত্যহ কথার বুটিফুল ফোটার জনসভায়
তারাই সহজে
বানায় নরক আশেপাশে। পথে-ঘাটে
ভিড়ে বাড়ে প্রতিদিন, লোকে লোকারণ্য চতুর্দিকে,
অথচ কী এক নিঃসঙ্গতা
ছেয়ে থাকে ঘন কুয়াশার মতো, প্রত্যেকে বিছিন্ন প্রত্যেকের
থেকে, হাত ধরবার মতো হাত নেই
কোনোখানে, যদিও নিয়ত সেতুবদ্ধনের গান
মঞ্জরিত গলায় গলায়,
প্রকৃতি দেখার মতো চোখ নির্বাসিত,
অনুভব করবার মতো
হৃদয়ের বড়ই অভাব আজ পাথরের দেশে।

আমাদের ক্লান্ত ছায়াগ্রস্ত চোখে আনে
মরীচিকা আজকের ইতিহাস প্রহরে প্রহরে;
রক্তাক্ত কাদায় পা আমার
ডোবে বারবার, দৃষ্টি যায় গুল্মোরের ডালে ডালে,
কখনো বা মজা খালে। মনে হয় আমি যেন তাদেরই মতন,
মৃত যারা খৃষ্টের মৃত্যুর ও বহু আগে।
চিবুক ঠেকিয়ে হাত বিষাদ নিমগ্ন, এমনকি
পাখির খুশির নাচ,
পদ্মের সংরাগও তাকে পারে না ফেরাতে
উল্লাসের দিকে। এ শহরে ক’জন মানুষ আছে
যাদের জিভের
ডগায় সাপের
জিভের তীক্ষ্মতা নেই? ক’জন মানুষ হেঁটে যায় কুটপাতে
যারা কেউটের বিষ ঠোঁটের আড়ালে
জমিয়ে রাখে নি? আজ ক’জন স্বজন পাবে অলিতে গলিতে,
যাদের দেখলে নেকড়ের পাল যাবে না পালিয়ে?

ভয় বিস্ফারিত চেখে চেয়ে থাকে সকল সময়; কেউ যেন
বলে যায়, এখন কোথাও কারো পরিত্রাণ নেই।
কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা এখন
কোন্‌ সেই খাদের কিনারে আত্মবিস্মৃত সবাই
কেউ তা বোঝে না। অপভাষা।
অতিশয় কোলাহল করে, আমাদের
প্রিয় খুঁটিগুলি কী ভীষণ নড়ে যায় বৃদ্ধের দাঁতের মতো
সারাক্ষণ। নৈরাজ্যের পূর্বাভাস পাই
ঈশানের মেঘঢাকা কোণে, ভয় হয়
কোথায় কখন ফের কারুকাজময় ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ে।