সিঁড়িতে ভীষণ ভিড়

সিঁড়িতে ভীষণ ভিড়। ট্রাউজার, পাজামা এবং লুঙ্গি পরে
ঠেলাঠেলি, হেঁটে যায়, দ্রুত যায়, দৌড়ে যায়।
ট্রাউজার পাজামার পা মাড়িয়ে দ্যায়,
লুঙ্গি পাজামাকে গুতো মেরে ছুটে যায়,
পাজামা এগোয় ঊর্ধশ্বাস ট্রাউজারের কণুই
নিপুণ এড়িয়ে
সিঁড়িময় অন্ধতার চেয়েও অধিক তমসায়
যায় ওরা ছুটে যায়। এই সিঁড়ি
অনেক উঁচুতে গেছে। কেউ কেউ অভীষ্ট উপরে উঠে যায়
সার্কাসের অতিশয় দক্ষ এ্যাক্রোব্যাটের মতন,
কেউ কেউ দৌড়ে যায়, উড়ে যায়, যেন ইকারুস নীলিমায়।
নিস্তব্ধ বসন্তে লতা-গুল্ম মুখে নিয়ে
এবং শরীরময় কাঁটা নিয়ে অনেকেই নিচে পড়ে যাচ্ছে।

সুদৃশ্য মোটরকার-লাল, নীল, সাদা, কালো, হলদে, সর্ষে রঙ,
ছুটে যায়,
ছুটে যায়,
কখনো দু’দিক থেকে তেড়ে-আসা দু’টি গাড়ি ষাঁড়ের মতন,
ক্ষ্যাপাটে সংঘর্ষে মাতে। কখনো বা ঝিমোনো ট্রাফিক
দূরন্ত ঊর্মিল হয়; উত্তরে দোকান-পাট দক্ষিণে দোকান-পাট,
মধ্যে
জনসাধারণ।

একজন প্রৌঢ় চৌরাস্তায় গোধূলিতে কী উদ্ধ্রান্ত কণ্ঠস্বরে
“আমার সর্বস্ব গেছে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন সুপার মার্কেটে”
বলে পড়ে যায় ক্লিন্ন নর্দমায়। কেউ বা সর্বত্র সর্বক্ষণ রক্তপায়ী
বাদুড়ের ভিড় দেখে অবসন্ন; পাথরের মতো অন্ধ
হয়ে যায় অনেকেই। দরজার কাছে গিয়ে দরজা দ্যাখে না,
তাই কেউ কেউ করে আত্মহত্যা। ভেনাসের লুপ্ত বাহুদ্বয়
পেয়ে গেছে ভেবে কেউ
প্রচণ্ড চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠে অকস্মাৎ ফের
বেঘোরে ঘুমোয় অবেলায়।
সংবাদপত্রের ঝকঝকে
প্রথম পাতায় মাঝে মাঝে
নেতাদের চকচকে জুতো শোভা পায়।
উচ্চরিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, সকলেই দৈর্ঘে
প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চি হচ্ছে, হচ্ছে হচ্ছে।

একটি ধূসর স্যুট ঢোকে ক্লাবে, সিগারেট ফোঁকে
সুনীল হাওয়াই শার্ট, চকোলেট শাড়ি
কোকের স্ট্র ওষ্ঠে খুব আলতো লাগায়,
কারো কারো জলপাই পল্লবের স্পর্শ-লাগা প্রিয় স্মৃতি ওড়ে
রাঙা পতঙ্গের মতো ফ্যানের হাওয়ায়।
আড়ালে নেভী ব্লু স্যুট কালো শিপনের
কানে কানে কী-যে আওড়ায়, হুইস্কির মায়া টানে
শুনতে পায় না কালো শিফন কিছুই,
নেভী-ব্লু-র ঠোঁটে কাঁপে শুধু…
বারান্দায় কালো শিফনের ওষ্ঠ নড়ে
সাফারি স্যুটের দিকে, বোঝেনা সাফারি স্যুট কিছু
যেন কেউ কারো ভাষা বোঝে না কিছুই।
রাত্তিরে রেকর্ড বাজে প্লেয়ারে কোথাও বেজে চলে
হায় এলভিস প্রেসলি
হায় এলভিস প্রেসলি
হায় এলভিস প্রেসলি
কখন যে তুমি
মরাল সঙ্গীত গেয়ে ভীষণ নিথর হয়ে গেলে…
হায় এলভিস প্রেসলি
তবুও তোমার কণ্ঠে ষাট দশকের ছটফটে
আনন্দ, সুতীব্র আর্তি উঠেছিল বেজে কী মোহন কলরোলে।
সিঁড়িতে অনেক ভিড়। অন্ধতার চেয়েও অধিক তমসায়
লোক আসে, লোক যায়; পুরোনো কাগজ, শূন্য ঠোঙা
বিধ্বস্ত পাখির বাসা সিঁড়িতে গড়ায়, উড়ে যায়। সিঁড়ি ছেড়ে
অকস্মাৎ কেউ কেউ স্বপ্নের মতন এলাকায় ম্যান্ডোলিন
বাজাতে বাজাতে হেঁটে চলে, কতিপয় অন্ধ পথ
হাতড়াতে থাকে সারাক্ষণ, তাসের ঘরের মতো পড়ে যায়।