মে ১৯৭১

১ মে (শনিবার)
রাত ১০টা
আজ মে দিবস। সারা দুনিয়ার মেহনতি মানুষেরা এক হোক, জাগুক মানবতা। বিশ্ব নবীর উদাত্ত আদেশ- সব মানুষ এক, এ সত্য মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান যে দম্ভে পদদলিত করছে তার সে দম্ভও যেন জন জাগরণের পদতলে পিষ্ট হয়। আজ পাকিস্তানকে গোরস্থানও বলা যায় না, যায় শশ্মান, মহাশশ্মান। মুসলমান যারা, যারা না খেয়েও রোজা রাখে, নামাজ পড়ে ছিন্ন জায়নামাজ পেতে, তাদেরকে হত্যা করে, পুড়িয়ে মেরেছে। আল্লাহ, তুমি কি করে এ সব সহ্য করছ? অসহায় নিরস্ত্র মানুষ, নারী শিশু তরুণ বৃদ্ধ কাউকেই বাদ দেয়নি এ পিশাচ দল। সব তোমারই ইচ্ছে বিশ্বাস করি না।

২ মে (রবিবার)
রাত ৮টা
প্রেত নগরী ঢাকা আজাবের করাল আভাস। গ্রামীণ জীবন দুর্বিষহ, মহামারীর কবলে অসহায় কান্নায় মরছে।
আজ ১৮ই বৈশাখে কালবৈশাখীর আভাস কিছুটা পাওয়া গেল। মাগরেবের নামাজ পড়ে উঠে দুলুর ফোন পেলাম। ওরা ভালো আছে, খবর পেলাম। এই হাজার শোকর। বাঁচলে একদিন দেখা হবে।

৩ মে (সোমবার)
রাত ৯টা
আজ রেডিও পাকিস্তান থেকে আমি বেঁচে আছি, এই সাক্ষাৎকার রেকর্ড হল। বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব। ইনশাআল্লাহ, এই বাংলাদেশকে আবার সুখী সমৃদ্ধি শান্তিময় রূপে দেখে তবে মরব। আজ দুপুর বেলাই কাল বৈশাখী দেখা গেল। সকাল থেকেই মেঘে মেঘে বেলা গেল। কালরাতে কালা-আলুর ৩টা বাচ্চা হল, আর ৩টা বিড়াল তা ভাগ করে নিল। এখন বাচ্চাগুলো নিয়ে কালা-আলু ঘুমাচ্ছে। গেরিলা যুদ্ধ অব্যাহত। পাক সৈন্যও মরছে কম না। ধীরে ধীরে সুস্থ ছেলেদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে রক্ত নিচ্ছে রক্ত শোষার দল। ক’দিন চলবে এ অত্যাচার দেখা যাক।

৪ মে (মঙ্গলবার)
রাত ১০টা
৩ দিন প্রচণ্ড কাল বৈশাখীর পর আজ ঝকঝকে রোদে ভরা দিন। ৪টা বোমারু প্লেন ২দিন থেকে সামনে উড়ছে। সীমান্তে কি হচ্ছে, কত লোক প্রাণ দিচ্ছে তার হিসাব নেই। আমার বাঁচার খবরে ভারত থেকে আমেরিকা পর্যন্ত এক বিরাট আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছে। বেঁচে আছি। কিন্তু কি দরকার ছিল আমার এ থাকার। কত গুণী, জ্ঞানী, সাধু, সংসারী, কবি, শিল্পী, গায়ক আজ হত প্রাণে, গৃহহীন। আমার মৃত্যু দিয়ে যদি কিছুও বাঁচত, এ জীবন সার্থক হত। আমার মনে ভয় নেই, ভাবনাও বড় নেই কিন্তু দুঃখের আফসোসের যে অন্ত নেই।

৫ মে (বুধবার)
রাত ৯টা
আমার মৃত্যু সংবাদ মিথ্যা জেনে রাত পৌনে ১১টায় আকাশবাণীতে দেবদুলাল বাবু যে কণ্ঠে যেভাবে সকলের হয়ে রেডিও পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানালেন, যদি তার সাথে অন্য মৃত্যু সংবাদও মিথ্যা বলে প্রমাণ করত রেডিও পাকিস্তান, তবেই না এর সার্থকতা সম্পূর্ণ হত। অর্বাচীনের দল, কেঁচো খুঁড়তে যে সাপ বের হবে তা রুখবে কি করে দেখা যাবে।

৬ মে (বৃহস্পতিবার)
রাত ৯টা
আকাশবাণী থেকে কিছু খবর শুনলাম। হানাহানির বিরাম নেই। যেই মরছে মায়ের বাছারা, সন্তানে পিতা, স্ত্রীর স্বামী, বোনের ভাই কত ঘর শূন্য হয়ে যাচ্ছে। মানুষের কোনো সঠিক খবরই পাওয়া যাচ্ছে না। বোমারু প্লেন উড়ছে ত উড়ছেই, জ্ঞান বিজ্ঞানের উপর ঘৃণা জন্মে যাচ্ছে, বিজ্ঞান যত মারণাস্ত্র তৈরী করেছে জীবন বাঁচাতে তার অর্ধেকও করে উঠতে পারেনি।

৭ মে (শুক্রবার)
আজ সারা দিন বৃষ্টি। নিম্নচাপ ঘনিয়ে আসছে, চট্টগ্রাম, চালনায় ২নং বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। আজ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টির দরুন হলনা। হায় বিশ্বনবী! হায় মানব বন্ধু! তোমার নাম নিয়ে শয়তানেরা একি খেলা শুরু করেছে। মহান তুমি! শরণার্থীর আশ্রয় তুমি। আজ তোমার নামে মানবতার অবমাননা কি বীভৎস রূপে চলছে। এর নিরসন হোক তোমারই পুণ্য নামের বরকতে। মিল্টনদের বাড়ীতে মিলাদে গেলাম, মন ভরল না।

৮ মে (শনিবার)
আজ সারাবিশ্বের মহান মানবের জন্ম মৃত্যু দিবস। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। কতবার কত সভা সমিতি, স্কুল কলেজ ইউনিভারসিটি আমাদের মহিলা সমিতি প্রত্যেকটিতে, এ পবিত্র দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়েছে, কি আনন্দ, কত সমারোহে। আজ জালেমরা এ দিনটিকে বিষণ্ণ বিষাক্ত অপবিত্র করে পালন করছে, ভাবতেও ঘৃণা বোধ হয়। আজও আখাউড়া, সিঙ্গারবিল, লালমনিরহাট-এ গোলাগুলী চলছে। আজও পথ থেকে ছেলেদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। আজ একজন নিজের চোখে দেখে এসে বল্ল, দুটি মেয়েছেলেকে মিলিটারী গাড়ীতে করে এনে স্কুলে ঢুকলো। আল্লাহ কি এসব দেখছে না।

৯ মে (রবিবার)
রাত ১১টা
আজ পঁচিশে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বকবি একজন মহামানুষের জন্মদিন। কোথায় আমার ‘ছায়ানট’, কোথায় সন্‌জীদা, সুকণ্ঠ পাখীরা আমার! সূর্য উদয়ের সাথে সাথে রমণীয় রমনার বটতলায় লাখো মানুষের সমাবেশে বিশ্বকবির বন্দনাগানে ঝংকৃত আকাশ বাতাস মুখরিত করা দিনগুলো। কবে আবার ফিরে আসবে সেই দিন! আজ মেহেরের বোন এসেছিল, কি নির্মম নিষ্ঠুরভাবে মেহের তার দুই ভাই মাকে শয়তান বিহারীরা হত্যা করেছে, আহা! সোনার মতো শিশুর মতো কবি মেহেরুননেসা। সেই ২৫ তারিখ রাতেই জালিম কাফের ওদের হত্যা করেছে। মেহেররা ত শহীদ হয়েছে। এই জালেমদের আল্লাহ কি করবেন, আল্লাহই জানেন।

১০ মে (সোমবার)
মে ১০, সোমবার।। রাত ১০টা
আজ বৈশাখী পূর্ণিমা, বুদ্ধের জন্মতিথি। উনিও ১০ তারিখেই জন্মেছিলেন। সারাদিন মেঘ-বৃষ্টিতে দিনটি বিষণ্ণ মলিন। এও এক দিকে মঙ্গলকর। মহাপুৰুষরাও ত পৃথিবীতে কম জন্ম নেননি, কিন্তু ধরার দুর্গতি ঘুচল কি? চিরকাল ধরে উত্থান পতন, দুর্গতি যুদ্ধ মহামারী দুর্ভিক্ষ চলেই আসছে। সেই যে এক অদৃশ্য বিশ্বনিয়ন্তা অলক্ষ্যে কি লীলা খেলায় মত্ত আছেন তার কিনারা কে কবে করতে পারল? কিন্তু নারীর উপর যে অত্যাচার চলছে তার কি প্রতিকারও তিনি করবেন না।
মামুনের কোনো সঠিক খবর আজও নেই। আছে, না মেরেই ফেলেছে কে জানে।

১১ মে (মঙ্গলবার)
রাত ১০টা, আজ গজারিয়ার দানব দল হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেল। শহরে চোরাইভাবে অবাঙালীদের দিয়ে গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। সমস্ত সভ্য দেশ এখন পর্যন্ত শুধু ভাষণ দিয়েই যাচ্ছেন। কোসিগিনের চিঠির কোনো জওয়াবই পাকিস্তানী প্রধান এখনও দেননি।
চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সরষের তেল নেই। কেরোসিন অগ্নিমূল্য। রাস্তায় বের হওয়া যায় না। এ কি স্বাভাবিক শহর!

১২ মে (বুধবার)
রাত ৯টা
আজ মিরপুরের অদূরে আমিন নগরে গোলা চালিয়ে বহু লোক মেরে ধান ক্ষেত পুড়িয়ে দিয়ে জালিমরা আরও গ্রামে গ্রামে হানা দিয়েছে। কাকে মারছে ওরা। নিজেরা এক অক্ষর কলমা দরুদ জানে না। মদে মাৎসর্যে বিভোর। তারা আবার বাঙালীদের কাফের বলে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
মামুনের কোনো খবর কেউ দিতে পারছে না। শোভার হার্টফেল করে মৃত্যু সংবাদটি কি বড় বেদনাদায়ক। আহা! বাচ্চা মানুষ, এই মৃত্যু তার ছিল।

১৩ মে (বৃহস্পতিবার)
রাত ৯টা
আমার বাছা শোয়েব শহীদ হয়েছে আজ ৮ বছর পূর্ণ হল। আজ ঘরে ঘরে আমার মতো অনেক বুক খালি করা মায়েরা আছে। আমার চোখের পানি ত কবেই শুকিয়ে গেছে ওদেরও চোখ বুক আজ শুকনো। সব মায়েদের বুকের ধনের বিনিময়েও কি আল্লাহ বাংলার সব অবশিষ্ট সন্তানদের জয়লাভ করতে দিবে না। নিশ্চয়ই দিবে। কোথায় শোয়েব? এইত আছে! বুকভরে আমার বাজান। আমার শোভন। আমার বাজান। তোর নিস্পাপ রক্তের বদলে বাংলার মাটি স্বাধীন হোক।

১৪ মে (শুক্রবার)
রাত ৯টা
৭টা বোমারু প্লেন উড়ছে। এখনও মুন্সিগঞ্জে বরিশাল পটুয়াখালীতে পামররা গোলাগুলী চালাচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখাবার জন্য শহর ও শেখ সাহেবের বাড়ীর রূপ পাল্টাতে ওরা কত না চেষ্টা করল। কিন্তু কার চোখে ধুলা দেবে।

১৬ মে (রবিবার)
রাত ১১টা
বৈশাখ শেষ হয়ে জ্যৈষ্ঠ এল। আজ ১লা জ্যৈষ্ঠ। ফুলে ফলে ভরা সে বাংলাদেশ কি আর আছে।

১৭ মে (সোমবার)
আশপাশের বাড়ীতে মৃত্যুর বিভীষিকা, সন্তানহারা জননী, স্বামীহীনা স্ত্রী পিতৃহীন শিশুর মুখ দেখি। গ্রামে গ্রামে মরণ লীলা। শহরের পথে সন্ত্রস্ত পথিকের নিঃশব্দ পদচারণা। তবুও হারামজাদারা স্বাভাবিক অবস্থাই বলে যাচ্ছে। শুনি নারী দেহ নিয়ে কামার্ত পশুরা ছিনিমিনি খেলছে। তরুণ তাজা কিশোর যুবকের রক্ত শুষে নিচ্ছে। আল্লাহ আর কত শোনাবে, কত দেখাবে। এবারে শেষ কর প্রভু। আজ ইডেন বিল্ডিংয়ে, মতিঝিলে ২টি ব্যাংক ও নিউমার্কেটে টাইম বোম ফেলে গেছে। কোনো কাগজে খবর বের হবে না জানি।

১৮ মে (মঙ্গলবার)
রাত ১১টা
আজ সারাদিন পাগলের মতো বোমারু প্লেন, হেলিকপ্টার উড়ছে অনেক। জাহেদের সাথে কথা হল। যার উপর যেভাবে অত্যাচার হয় তার সেইভাবেই ভোগান্তি। বাচ্চা দুটির খবর নেই। কাল রাত থেকে যা গরম পড়েছে, বোম্বিং করার সুবিধাও খুব, রকেট হাইজ্যাক করার খবরও কোথাও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু জানতে কারুর বাকী নেই।

১৯ মে (বুধবার)
রাত ১১টা
কি করে যে দিনরাত কেটে যাচ্ছে, আল্লাহ’ই জানেন। সোনার বাংলার সোনার ছেলেরা আর ক’টি রইল। চোখ বেঁধে মিলিটারীরা কোথায় নিয়ে যায়। ঘরে ঘরে মা বোন বন্ধুদের এত আর্ত হাহাকার আল্লাহর কানে পৌঁছায় না, এই আশ্চর্য। আতঙ্কে মায়ের রাত দিন কাটছে। মেয়েদের ইজ্জতের ভয়। প্রাণের ভয় কারুরই নেই। এ এক অসীম সংহতি। মীর জাফরের দলে যারা আছে, তারা নির্মূল হবে একদিন অন্য ভাবে। যেমন হয়েছিল মীর জাফর, মীরন। আজ ঢাকায় হাত বোমা পড়েছে ইডেন বিল্ডিং, মতিঝিলে ২টি ব্যাংকে, নিউমার্কেটে। আরও কি হবে কে জানে। বোমারু প্লেন উড়ছে পাগলের মতো।
দারুন গরম পড়েছে।

২০ মে (বৃহস্পতিবার)
তিক্ত বিরক্ত মন! কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে না। নিত্য মৃত্যুর খবর পাই। আশপাশে বাড়ী বাড়ী স্বামীহীনা সন্তানহীনাদের মুখ দেখি। অন্তরে বাহিরে দাবদগ্ধজ্বালা। করুণা কর করুণাময় আর কত!

২১ মে (শুক্রবার)
হাত বোমা ছোড়ার সন্দেহে কাগজী ভাষায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আদর্শ শাস্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। মিথ্যাবাদীর দল কতজনকে যে ধরেছে মেরেছে ও মারবে তার ঠিক কি? আল্লাহ রহম করুন। আজ শাব্বীরের চিঠি পেলাম। ওরা যেন শান্তিতে থাকে।

২২ মে (শনিবার)
রাত ১০টা
ব্যাপার কি, বোঝা গেল না। আজ সারাদিন ঢাকার আকাশে প্লেন উড়ল না। গত ২দিন ধরে ভীষণভাবে চেকিং হল, কলমা পড়িয়ে এমনকি উলঙ্গ করে মুসলমান কি না পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল অনেক রাত অবধি মিলিটারী গাড়ী চলেছে, আজ সবই অস্বাভাবিকভাবে স্তব্ধ। শয়তান কোন জাল বুনছে, কে জানে! গরমও প্রচণ্ডভাবে পড়ছে। দিন দিন অত্যাচারও সীমাহীন। এদিক ওদিক থেকে গ্রামের যে অবস্থা শোনা যাচ্ছে, বুক ভেঙে যায়। আল্লাহ অসহায়ের সহায় হবেন না?

২৩ মে (রবিবার)
কাল থেকে বোমারু প্লেন উড়ছে না। কিন্তু যা বীভৎস অমানুষিক কাণ্ড-কারখানার খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে সমস্ত শহর আতঙ্কিত। পাড়ায় পাড়ায় রাতে দিনে অনুসন্ধানের নাম করে যে অত্যাচার চলছে তার ইয়ত্তা নেই। আজ সকালে রেডিও থেকে সৈয়দ জিলুর রহমান, হেমায়েত ও অন্য একটি লোক এসেছিল গত সপ্তাহে ৫৫ জন ঢাকার শিল্পী সাহিত্যিক যে দেশের নিরাপত্তা রক্ষা ও মৃত্যুর মিথ্যা প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন তাদের সাথে নাম সই নিতে এসেছিল ওরা। দেইনি, আল্লাহ ভরসা। বেলা ১টায় মিলিটারী গাড়ী বাড়ীর দুয়ারে এসে থেমে আবার চলে গেছে। কানুর ছোট ছেলে খোকা ১৭ তারিখ সকাল থেকে আর বাড়ী ফিরেনি। সন্ধ্যায় খবর পেলাম, কপাল, আল্লাহ যেন বাঁচিয়ে রাখেন। একদিন ফিরবে।

২৪ মে (সোমবার)
রাত ৮টা
১০ তারিখে মানিক বাড়ী গেল। আজ দুপুরে খবর এল মিলিটারীর গুলীতে সে শহীদ হয়েছে। আজ তার ঢাকায় ফিরে আসবার কথা ছিল। আর সে আসবে না। বাড়ীর গাছ পাতা ফুল ফল মানিকের হাতের ছোঁয়ায় ভরে আছে। আল্লাহ তাকে শহীদ করেছেন, তার বিবি বাচ্চাদের যেন জালেমদের হাত থেকে রক্ষা করেন।
দুপুরে ঝড়বৃষ্টি হয়ে গেল। বোমারু প্লেনও উড়ল। আল্লাহ কি এ আজাব থেকে আজও মুক্তি দেবেন না।

২৫ মে (মঙ্গলবার)
রাত ১০টা
মানিকের অভাব শুধু এখন নয় দিনে দিনে বেদনার্ত হয়ে দেখা দেবে। সারা বাড়ীতে তার চিহ্ন। তার আন্তরিকতার মায়াস্পর্শ। এমনই কত মানিক কত ঘর অন্ধকার করে আজ দস্যু কাফেরদের হাতে শহীদ হয়েছে তার সীমা নেই। ৩টি মেয়ে দুটি ছেলে, বড়টা কি করে যে দিন কাটাচ্ছে, কত শত্রু আগেও ছিল, এখন যে কি হচ্ছে ও হবে কে জানে। আবার কাল থেকে বোমারু বিমান খুব উড়ছে।

২৬ মে (সোমবার)
রাত ৯টা
বিকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। খুব গরমের পর এ বৃষ্টি দুনিয়া ঠাণ্ডা করা। কিন্তু বুক আর কারুর ঠাণ্ডা হয় না ত। কোথায় মায়ের বাছারা সুইসাইড স্কোয়াড বা বাংলা স্বাধীন করতে দলে দলে মরছে, আমরা কি করছি, কি করতে পারি? গত রাতে আদমজী নগরের বাজার পুড়িয়েছে। আজও বোমারু বিমান কোথায় হানা দিয়ে কি করে এসেছে এ খবর দেয়ার মতো বুকে সাহসও ঘৃণিত পশুদের নেই। এরা নাকি বীর, এরাই নাকি মুসলমান।

২৭ মে (বৃহস্পতিবার)
রাত ৯টা
কোথাও আর অন্য কথা নেই। মা হারা বাপ হারা সন্তান হারা মাতা পিতার নিরুদ্ধ বেদনার্ত কাহিনী। কিন্তু তার মধ্যে সুগভীর বিশ্বাসে কি অপরিসীম ধৈর্যে প্রতীক্ষা। আল্লাহ সুদিন দেবেন। সকলের মিলিত প্রার্থনায় আল্লাহ দেশের ভালো নিশ্চয়ই করবে। ৮ টার সময় বোমার শব্দ হল। আজ নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় একটি দেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আহা! কোন মায়ের বাছা।