শালবনে হারিয়ে যাওয়া

শালবনে হারিয়ে যাওয়ার মতো
তোমাকে খুঁজি, পাখির মুগ্ধ কলতানে
জ্যোৎস্নার প্লাবিত সংসারে।

অথচ তুমি কোথায় ছিলে না বলো?
যে দৃশ্যে তাকাই না কেন সে দৃশ্যে তুমি ছিলে
রূপে, গন্ধে, বর্ণে কেবল সমাহার।

তোমার অস্তিত্ব এখন শুধুই ধু-ধু শালবন
ধু-ধু হারিয়ে যাওয়া
ধু-ধু নীলিমায় ঝরা পালকের ঢেউ।

একদিন বিস্তীর্ণ স্বপ্নের মাঠ পার হতে দেখেছিলাম
এক দিব্য জ্যোতির্ময় যৌবনবতীকে
সে যতই অগ্রসর হচ্ছে তার পশ্চাৎদ্ভাগ
ততই অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছিল একান্ত নিয়মে
আর সামনে তার প্রজ্জ্বলিত আলোর শিখা
পেছনে আমি যেন এক অন্ধকার পিণ্ড
আমিময় অন্ধকার পিণ্ডটিকে নিয়ে যতই এগিয়ে যাই
মাঝখানে তোমার পশ্চাৎছায়ার কৃষ্ণ-দেয়াল
ততই দৃঢ় এবং ঋজু ভঙ্গিতে
আলোকময় রশ্মিগুলোকে ঘিরে থাকে।
এবারও আমিময় আলোর দিকে
মুখ করে ছুটতে চাইলাম-
তবুও তুমি এক রহস্যময় আঁধারের বন্ধন,
ছিন্ন হতে দিলে না,
রেখে দিলে শুধু গতিষ্মান সময়ের সন্ধিস্থলে।
আমি এখনো তোমাকে খুঁজি
পৃথিবীর আদিম মন্ত্রে, নক্ষত্ররাজির উদ্বেলিত উদ্যানে
অবলুপ্ত কোনো প্রাচীন পুরাণে।

কিন্তু তোমার অর্ধেক অন্ধকার আর অর্ধেক আলোর শরীর
কখনো আর একত্র হবে না জেনেও
এই শালবনহীন প্রান্তরে
আজ আমি শালবনে হারিয়ে যাওয়ার মতো
তোমাকে পাওয়া, তোমাকে খোঁজা, তোমাকে হারানো
পূর্ণিমার কাছে, জ্যোৎস্নার একান্ত সাহচর্যে
পাখির উচ্ছল কলতানে
মর্মরিত পাতার আনন্দে
তোমার একাংশ অন্ধকারকে নিবিড় প্রজ্ঞায়
আজো জানতে চাই,
বার বার হারিয়ে যাই,
তোমার নির্মিত এই গভীর শালবনে।