চিত্রনাট্য ২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কোনো এক সোমবার। সকাল দশটা বিশ।
প্রচণ্ড বোমার শব্দে সবাই চমকে তাকিয়ে দেখলো
দুই দল তরুন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
মারমুখি এলোমেলো ভঙ্গি। বিক্ষিপ্ত এবং সশস্ত্র।
একটি ছেলের শরীর ধোঁয়ার ভেতর ছিটকে উঠে
টুকরো টুকরো হয়ে বিচ্ছিন্ন- আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
মাটি মাংশ ধোঁয়া
কোনোটাকে আর আলাদাভাবে চিনবার উপায় নেই।

তরুনটি মারা গেলো।
রক্তাক্ত একটি চোখ তার কোটরের বাইরে ঝুলছে।

নিচের পাটির দাঁতগুলো
উল্টে এসে পড়েছে ওই চোখটির কাছে।
বাটা কোম্পানির জুতোর পাশে পড়ে চেয়ে রয়েছে
অন্য চোখটি। গোল একটি চোখ।
রক্তাক্ত পলকহীন।

হলুদ থকথকে ঘিলু ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশে।
জিনসের প্যান্টের একটি ছেঁড়া টুকরোর সাথে
একাকার হয়ে আছে এক টুকরো নরোম মল।
অর্ধজীন ভাত মাছ
পাকস্থলি ফুটো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিচ্ছিন্ন একটি পড়ে থাকা পায়ের উরুসন্ধির মাংশ
চমকে উঠার মতো থর থর কোরে কাঁপছে।

এগিয়ে আসা দর্শক তরুনদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি
তার নিজস্ব বিস্ময় যথেষ্ট উচ্চস্বরে উচ্চারণ করলো-
প্রথমঃ ছেলেটি মারা গেলো।
দ্বিতীয়ঃ মারা গেলো নয়- মারা হলো।
তৃতীয়ঃ এই ছেলেটি কেন মরলো?

দর্শকের বিস্ময় প্রকাশ আর প্রশ্নোত্তরের সময়টুকুর মধ্যে
বোমার শব্দে উড়ে যাওয়া কাকগুলো
ফিরে আসতে শুরু করলো বিভিন্ন ডালে, দেয়ালে, ছাদে-

প্রথমঃ ছেলেটি কে? ছাত্র না বহিরাগত?
দ্বিতীয়ঃ মৃত্যুই কি তার যথেষ্ট পরিচয় নয়?
তৃতীয়ঃ আর কিছু না? শুধু মৃত্যু?
মৃত্যুই মানুষের একমাত্র পরিচয়?
দ্বিতীয়ঃ হ্যাঁ। মৃত্যুই মানুষের সর্বশেষ পরিচয়।
মানুষ মরছে- বিষে, বোমায়, চাকুতে, বুলেটে ও
বেয়োনেটে।

এই সভ্যতায়
মৃত্যু ছাড়া মানুষের অন্য কোনো পরিচয় নেই।
ইতিমধ্যে এ্যাম্বুলেন্স এসে পড়েছে ঘটনাস্থলে।
(সম্ভবত এটাই তাদের সবচেয়ে ত্বরিৎ আগমন)
ভিড়ের জটলা ভেদ কোরে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী
ছিন্নভিন্ন লাশটিকে তুলে নিলো গাড়ির ভেতরে।

লাশকাটা ঘরে এখন তার জন্যে অপেক্ষা করছে
একরাশ অবহেলা। ডোমের বীভৎস চাকু কাটাছেঁড়া এবং
সবশেষে মৃত্যুর কারন নির্দেশ করা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট-

রক্ত শীতল করা সাইরেন বাজিয়ে
অবশেষে এ্যাম্বুলেন্সটি চলতে শুরু করলো।
পেছনে পড়ে থাকা রক্তের উপর
তখন একটি দুটি কোরে মাছি পড়তে শুরু করেছে।।

২৯.০৫.১৩৯৩ রাজাবাজার ঢাকা।