১৪ ফেব্রুুয়ারি ১৯৮৩

– কীসের নেশায় আজ লক্ষ লক্ষ ছাত্ররা নেমেছে
বিক্ষোভ মিছিলে? কেন? ব্যক্তিগত কোনও লাভ লােভ?
গাড়ি-বাড়ি টাকাকড়ি পাবে কেউ? স্বার্থ আছে কারও?
লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদী তরুণেরা এ মাটির প্রাণ
এ মাটির ঘ্রাণ নিয়ে এ মাটির গান গেয়ে বাঁচে।
কত তরতাজা ফুল ফুটেছে যে প্রথম ফাগুনে!
বায়ান্নোতে তবু ছিল ভিন্ন ভাষা ভিনদেশি রাজা।
ভাষা নিয়ে স্বভাষীর সাথে যুদ্ধ কে কবে শুনেছে?
কুশিক্ষার অন্ধকারে ছেয়ে যাবে স্বাধীন স্বদেশ
রুখব অন্যায় আজ সবে মিলে দেব না দেব না
বাঙালির মেরুদণ্ড ভেঙেচুরে অচল বানাতে!

– অর্ডার অর্ডার
গুলি চালাে।।

হুকুম তামিল করাে। শালা সব শুয়ােরের দল
দুঃসাহস কত বড়, অপমান আমাকে করেছে!
এত বড় এই আমি, মাথাখানি আকাশে ছুঁয়েছে
নড়ে না চড়ে না তারা, করে যদি চাদ্দিক ঘেরাও?
বেজন্মা ছাত্রের দল, এত সােজা আমাকে হটানাে?
সাম্রাজ্যবাদের সাপ, দুগ্ধপােষ্য কালসাপ আমি
বিষ আছে, বিষ আছে আহা বাপু ছােবল দেখনি।

অর্ডার অর্ডার
গুলি চালাে।

গুলিতে ঝাঁঝরা করাে বুক মেলে দাঁড়ানাে ছাত্রকে।
স্লোগানে ফেরাবে তারা শিক্ষানীতি, দুঃসাহস দেখাে!
নীতিকে ফেরানাে যায়? আরে বাপু নীতি তাে নীতিই!
অস্ত্রের অভাব নেই। ষড়যন্ত্র? কী নেই আমার?
দুর্নীতি উচ্ছেদ করে চালিয়েছি নীতি নীতি খেলা
গর্দভ বাঙালি বােবা বনে যাবে। আহারে বাঙালি!
লাগাও বুটের লাথি, মারাে লাঠি আল্লাহর নামে।
মাথা লক্ষ্য করে ঠিক, যেন মরে, যেন রক্ত ঝরে
আহা রক্ত রক্ত খেলা কতদিন কোথাও দেখিনি।
কী সুন্দর টকটকে লাল রং ঢাকার মাটিতে
সারা দেশ জুড়ে আমি এরকম মাটিই বানাব।

অর্ডার অর্ডার
গুলি চালাে।

মনভুলানাে কথা তাে ঢের বলি, কবিতাও লিখি
রাজা-বাদশা করে তাে পাপটাপ কবিরা করে না।
তবু কিনা বাঙালিরা বেপরােয়া নাচতে নেমেছে?
যুদ্ধবাজ ছেলেপেলে কখনই বা কোথায় জন্মাল?
মুক্তিযুদ্ধ শিখিয়েছে কোন ব্যাটা? মরেছে পচেছে
যুদ্ধের ব্যারামে দেশ। তবু কিনা জীবাণু মরেনি?
(মুক্তিযুদ্ধ কাকে বলে ত’বা ত’বা জীবনে দেখিনি)
আমাকে প্রণাম করাে, আমি রাজা। মাথা নত করাে।
আমি খােদ খােদাতালা, নতজানু সেজদা শেখােনি?

অর্ডার অর্ডার…

– আমাদের পথরােধ করে কারা দাঁড়িয়েছে এরা
ফিরব না। ফিরব না। আছে এই বুকেতে বিশ্বাস।
ভালবাসা একমাত্র অস্ত্র আছে। ফিরব না আজ
রক্ত নেবে কত রক্ত? নেবে নাও। রক্ত আরও দেব।
বাঙালি হয়েছ ভাল, বাঙালির ইতিহাস জানাে?
চৌদ্দ দল একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে বলেছে
আমরা যাবই যাব, পথ ছাড়াে, খেপিয়ে তুলো না।
ওইখানে সিংহাসনে বসে আছে যে রাজাধিরাজ
তার কাছে সােজাসুজি বলে দেব এ নীতি মানি না।

ট্রিগারে রেখেছ হাত কেন বলাে কীসের অন্যায়?
দ্রিম দ্রিম দ্রিম…

আরে এ কী হত্যাকাণ্ড চারদিকে জুলুম জখম
আমরা কি জানােয়ার? নেড়িকুত্তা? শিয়াল শূকর?

– কেমন দেখলে বাছা ক্ষমতার জাদুকরী খেলা?
কেমন সেয়ানা আমি, হাড়েমাংসে খিচুড়ি বানাই।
গদিতে আরাম কত, এ আরাম এখনি ছাড়ব?
নীতির নামে দুর্নীতি চাপিয়েছি বাঘা বাঘা গুরু
এ নীতি ভাঙব কেন যত হােক তুমুল তাণ্ডব
বেলাজ ছাত্রের পল বেয়াদব মিছিলে নেমেছে
এদের নিশ্চিহ্ন করে শুদ্ধ করাে তামাম জমিন।
মরছে মরুক, তাতে আমার কী? স্বজন তাে নয়।
আমি ভাই বেশ আছি। সুস্থ দেহ রক্তারক্তি নেই।
আমাকে পাহারা দাও আমি যেন মরি না কখনও
এদের বিশ্বাস নেই। বাঙালি তাে! রক্তেতে আগুন
আমাকে আড়ালে রাখাে চুপিচুপি লুকিয়ে-টুকিয়ে
কখন উঠবে জ্বলে সর্বনাশ আগুন! আগুন!

আমি কি সেয়ানা কম? কথা বলে বাঙালি ভুলাব।
সহজ সরল মন যা যা বলি মাথা পেতে নেবে
বজ্জাত ছাত্রেরা কেন রাজনীতি শিখল আবার
কানে তুলাে পিঠে কুলাে বেঁধে ছাত্র পড়া শিখে যাবে
জাহান্নামে যাক দেশ, তাদের কী? মাথাব্যথা কেন?
যত নেতা আছে দেশে পুরে রাখাে বদ্ধ কারাগারে
কী করে গজায় দেখি রাজনীতি মূল ছিঁড়ে নিলে
কী করে বিদ্রোহ আসে, কারা এসে আমাকে টলায়!

– এ কেমন মুক্তিযুদ্ধ দেশে আজ গণতন্ত্র নেই
এ কেমন স্বাধীনতা, বাঙালিরা শােষক সেজেছে?

কী শিক্ষা দিয়েছে বলাে ইতিহাস এই কি নমুনা?
প্রতিকণা রক্ত থেকে একদিন জাগবে বিদ্রোহ
খুনের বদলা নেব সারা দেশে খেপেছে মানুষ
জান্নাতের দরােজায় লাথি মেরে জাগাব তােমাকে
পাবে না রেহাই তুমি, ক্ষমা তুমি পাবে না কখনও।

(গ্রন্থঃ শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা)