ফেরার পিপাসা

ফিরে যেতে সাধ জাগে, যেন ফিরে যাওয়ার পিপাসা
জাগায় সুদূর স্মৃতিঃ মায়ের আঁচল ধরে টেনে
দেখায় দূরের নদী, ওইতো হাটের নাও মাগো
দখিনা বাতাসে দ্যাখ ভেসে গেলো সমস্ত সোয়ারী;
হরিণবেড়ের মাঠে পৌঁছে যাব সন্ধ্যার আগেই
এ বেলা ভাসালে নাও রাত অত আঁধার হবে না
আকাশের দিকে দ্যাখ্, কোথায় ঝড়ের দাগ বল?
মিছেমিছি ভয় পাস অনর্থক অশুভ ভাবিস।

বাপের কবরে গিয়ে মোম জ্বেলে কাঁদলে তখন
আমি কি বলবো কিছু? না মা আমি জোনাক পোকায়
আঁঠালো লতায় বেঁধে মালা করে পরবো সুন্দর।
আমি তোর মোট নেবো, তোরঙ্গটা দিস মা আমাকে
হেঁটে হেঁটে পা ফাটালে চটি তোর নিজেই বইবো।
নে তোর পানের বাটা, বোরখা নে গো, মামানীকে বল-
তাহলে এবার আসি দুঃখীদের সংবাদ নিও গো।

বত্রিশ সায়েদাবাদ ঢাকা- এই বিষন্ন দালানে
তেমন জানালা কই? যাতে বাঁকা নদী দেখা যায়
ধবল পালের বুক যেন মার বক্ষের উপমা,
কোথায় সলিলে ভাসে জোয়ারের তাবৎ নায়রী,
দেয়ালের ফ্রেমে রাখা কে দুঃখিনী জলের জলুস
পাথর ফাটানো সান্ত্বনার শব্দের মতন
তুমি কি জননী সেই, অভাবের আভায় দলিত
বাঙলার মানচিত্র এ ঘরের পেরেকে রয়েছো?

স্বপ্নের আঘাতে আমি সারারাত ঘুমাতে পরি না
অথচ বালককালে মা আমার দক্ষিণ বাজুতে
রূপোর মাদুলী তুই বেঁধেছিলি স্বপ্ন না দেখার,
তবু কেন জননী গো খোয়াবের অসুখ সারে না!
সামান্য আবেশ এলে ভেসে যাই নূহের নৌকায়
অথবা উড়াল দিই আশার পাখিটি একা একা
প্রবল হাওয়ার মধ্যে আদিগন্ত শোকের কিনারে
নিঃশব্দে উড়তে থাকি ঢেউয়ে ঢেউয়ে, যদি কোনদিন,
আদিম উদ্ভিদ রেখা দেখা দেয়- কোমল কৌশিক
দারুণ বালুর বেগ, দিগ্বিজয়ী মাটির মহিমা।