তোমার কবিতায়

বুঝলে হায়দার, আজকালকার পদ্য আর পড়া যায় না;
কী যে ছাইভস্ম লেখো
আগা নেই মাথা নেই, যা খুশি তাই লিখছো
কী যে বলতে চাও, কাকেইবা বলতে চাও
একমাত্র তোমরাই বোঝো।

অথচ আমাদের কবিতায় কী-না থাকতে পারতো, বলো-
এত বড়ো মুক্তিযুদ্ধ গেল, সারাদেশে
রক্তের স্রোত বইলো;
ভারতে এক কোটি উদ্বাস্তু
দশ লক্ষ গৃহহীন
মা বোন ধর্ষিতা
বুদ্ধিজীবী নিখোঁজ, হত্যা
ত্রিশ লক্ষ লোকের বিনিময়ে স্বাধীনতা
এবং ১৯৭৫-এ জাতির জনক
সপরিবারে নিহত
নিহত
নিহত
নিহত
নিহত
এবং নিহত-
-বলো, কোথায় লেখা হলো সেই কাহিনী
কোথায়ইবা সেই মহাকাব্য, বিষাদসিন্ধু?

হায়দার, তোমাদের কবিতা পড়লে মনে হয়
বিগত তিন দশক ধরে
আমরা বেশ সুখেই আছি;
মনে হয়:
বাংলাদেশে প্রেম ভালোবাসা ছাড়া আর কিচ্ছু নেই।

আমি কিন্তু দেখতে পাই
হাসান হোসেনের মুণ্ডের জন্যে
এজিদ আর সীমারের বংশধর, আজো
পথে পথে ঘুরছে।
দেখতে পাই
পেট্রোডলারের কাধে কাধ মিলিয়ে
সাম্রাজ্যবাদের তীব্র নখ
ছিন্নভিন্ন করছে
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, বাংলাদেশ।


আমি অবশ্য আদার ব্যাপারী, তাই
জাহাজের খবর রাখিনি কোনোদিন; কিন্তু,
স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি
ধোঁয়ার ধোঁয়াকার হয়ে আসছে
আকাশ;-
শুনতে পাচ্ছি
বুটের আওয়াজ আর ট্যাঙ্কের গর্জন ছাপিয়ে
গণমানুষের ক্ষিপ্র পদধ্বনি-
আমার বিশ্বাস;
অচিরেই পৃথিবীর ভিত্তিভূমি নাড়িয়ে দেবে।


না, এমন আর কথাটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নয়;-
প্রতিদিনের মৃত্যুর চেয়ে
একদিনের মৃত্যু অনেক শ্রেয়, তাই
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে হলে
আরো একটি মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন।
-হায়দার, তুমি তোমার কবিতায়
সেই দিনের কথা লেখো।

২৪/১২/১৯৮৩