শ্লোগান

ফিরছে সবাই, ধারাজলে সুখী খড়কুটো, ফিরছে সবাই।
তৃপ্ত উজ্জ্বল মুখ, সিল্কের নরম ঢেউ, মসৃণ বিহ্বল চুল
ঠেকিয়ে প্রফুল্ল মেঘে, বেহালার সুর ঢেলে ধাতুতে কংক্রিটে
ব্যর্থতার স্পর্শহীন বিশাল ব্যাপক জনমণ্ডলি ফিরে যাচ্ছে ঘরে।
পতাকাখচিত সুখ দোলে চারপাশে, বাতাসে ঝলকে ওঠে সেতারের সোনা তান।
যা কিছু চেয়েছে তারা: ঘুম, কুসুম, দু-চোখে নদীর রেখা,
উজ্জ্বল ধানের গুচ্ছ, ওষ্ঠে পাখির মাংস, পুলকিত স্ত্রীসঙ্গম-
সবই পেয়েছে।
মেঘ ফিরে যাচ্ছে, কলসি বোঝাই তার পাললিক জল;
জ্যোৎস্নাভারাতুর চাঁদ যায়, নীল থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে মাখন আঁচল;
পাখি ফেরে, ঠোঁট থেকে গ’লে পড়ে সুরের শ্রাবণজল রিকশার বনেটে;
বাস্তব তরুণ ফিরছে অবাস্তব তরুণীর হাত ধ’রে;
জলরাশি, যাচ্ছে আপন শহরে,
শহর, আপন পল্লীতে;
বৃদ্ধ, ফিরে যাচ্ছে যৌবনে;
বর্ণমালা, জলতরঙ্গের মতো মৌলিক ধ্বনিতে;
জনমণ্ডলি ফিরে যাচ্ছে আপন কুলায় সময়াস্তের দুর্ভাবনা ভুলে।
ক্ষেত, ফিরে যাচ্ছে ফলন্ত তরঙ্গরশি শ্রোণিভারে দোলাতে দোলাতে;
নৌকো, তম্বীস্তনের মতো পাল কাঁপে মৌশুমি বাতাসে;
সবাই ফিরছে ঘরে সুখী তৃপ্ত সুন্দর মায়াবী।
আমি একা, শূন্য বৃক্ষ, দাঁড়িয়ে রয়েছি ঠাণ্ডা শূন্যতার মুখোমুখি,
শূন্যতা পেরিয়ে মূল পৌঁছে শূন্যে, ডাল নড়ে শূন্যের প্রহারে;
আমার উত্তরে কাঁপে শূন্যলোক, দক্ষিণে শূন্যের ভূভাগ,
পশ্চিমে ডুবছে লাল শূন্য, পুবে উঠে আসে ধবধবে ভয়াল শূন্যতা।
আমি একা শ্লোগানমুখর, কম্পমান সর্বলোক, অর্থাৎ শূন্যতা।