একখানি হাসি

দিন ভর তার বহু কাজ ছিল, এখানে ওখানে ফিরি,
যত্নে ও স্নেহে কাজের মধ্যে ফুটাইতেছিল ছিরি।
মোরে ডাকি কথা বলিবে কখন? ব্রজের পথের পরে,
সারা দিনমান আঁটঘাট বেঁধে জটিলা কুটিলা ঘোরে।
এ দেশের সব উল্টো ব্যাভার, হাটে হাটে দাও ঢোল,
কেউ শুনিবে না, কেউ আসিবে না বাধাইতে তাহে গোল
কানে কানে কথা বলিবে যখনি অমনি সকলে আসি
না শুনেও তার টীকা-টিপ্পনী বানাইবে রাশি রাশি।
জোরে যাহা বল, কারো ভ্রূক্ষেপ হইবে না শুনিবারে,
চুপি চুপি তাহা ব’লে দেখ দেখি ‘ক’জন না শুনে পারে?

জগৎ জুড়িয়া করে কোলাহল মল্লিনাথের মিতা,
গোপন কথায় ভাষ্য লিখিছে লইয়া নীতির ফিতা।
তবু এরি মাঝে এক কোণে সে যে দাঁড়াল আমারে দেখি,
গোলাপের মত দুটি রাঙা ঠোঁটে একখানা হাসি লেখি’।
একখানা হাসি,- যেন আকাশের একখানা মেঘ ছেয়ে,
পূর্ণ চাঁদের জোছনার জল পড়ছিল বেয়ে বেয়ে।
যেন প্রভাতের সোনালী আলোক বাঁধিয়া পাখার গায়
এক ঝাঁক পাখী উড়ে চলেছিল আকাশের কিনারায়।
যেন গাঁর বধূ প্রদীপ ভাসায়ে গাঁয়ের ঘাটের জলে,
কাঁকণ বাজায়ে কলস হেলায়ে গার পথে গেল চ’লে।

আজিকে তাহার বহু কাজ ছিল, মোরও ছিল ব্যস্ততা,
সবগুলি তার জড়াইয়া দিল একটি হাসির লতা;-
সেই লতা ‘পরে ফুল ফুটেছিল, তাতে ব’সে মধুকর,
কথায় কথায় জোড়া দিতেছিল বেদনার তাজ-ঘর।
একখানি হাসি দেখেছিনু তার, যেন বহুদিন পরে,
দূর দেশ হ’তে অতি চেনা কেউ চিঠি লিখিয়াছে মোরে।
একখানি হাসি! আকাশ হইতে একটি পাখীর গান,
দুপুরের রোদে লাঙল চষিতে জূড়াল চাষীর কাণ।
একখানি হাসি। গংকিণীজলে যেন বেহুলার ভেলা,
লখীন্দরের শবদেহ ল’য়ে কোথায় করেছে মেলা।
যেন আকাশের বুকে ভেসে যায় একটী রঙীন ঘুড়ি-
তারি ‘পরে যেন বক্ষ রাখিয়া কোথা যাওয়া যায় উড়ি’।
একখানা হাসি! নহে বহু কথা, নহে প্রিয়, প্রিয়তম,
প্রাণবল্লভ যদিও লেখেনি, নহে তার চেয়ে কম।

ওযেন কথার গীতগোবিন্দ! হাফেজের বুল্বুলি,
-ওরি মাঝে বসি পাখায় মাখায় তারা গুঁড়ো-করা ধুলি
একখানি হাসি! বাঁকা তরী বেয়ে এসেছে ঈদের চান্,
যেন তারি গায় লেখা রহিয়াছে ভেস্তের ফর্মান।