এই সেই শীর্ণ- দীর্ঘ লোক

এই সেই শীর্ণ- দীর্ঘ লোক- তবে
দাঁড়ায়ে রয়েছে ঐ এক সারি পাথরের পিছে
যেখানে আকাশরেখা সূর্যের সব অবলেশ
তুলে নিয়ে ক্রমেই হতেছে ফিকে-নীল
যতই সে বিকেলকে পেয়ে যায় প্রাণের ভিতরে

এত দিনে ফাঁসিকাঠে ঝুলে কবে মানুষটা হয়ে যেত ভূত
ভূত হয়ে যেত অই লোক
অথবা কঙ্কাল,- কোনও গাছের ডালের থেকে স্তব্ধ বিকেলের
গোমেদের মতন আলোয় দুলে- পৃথিবীর প্রাচীন বিম্বকে
পেয়ে যেত মুখোমুখি- সময়ঘড়িতে ঘুরে সৈকতের বালি
সমাজের অপতৃপ্তি সকলে প্রবীণতর হয়ে যায়
যখন যাত্রা শেষ ক’রে দেখে চোখের স্তিমিত পথে
বিকেলের আলো, ডাল, কঙ্কালের মতো সব ডাল
অথবা কঙ্কাল নিজে- হেমন্তের বিবেকের বিনিয়োগে
কেহই পৃথক নয় কারু থেকে;- জেগে আছে।
রয়ে গেছে।

তখন সম্পূর্ণ হয় পৃথিবীর পূর্ণ বৃত্তছবি
আমাদের পরিষ্কার ধারণার কাছে- চুপে এসে কমলালেবুর মতো
দুই দিকে খানিকটা চাপা তার মেরুর উপরে
তখন বিচার এসে দাঁড়ায়েছে তুষের মতন ধূম্র বিকেলের
নিমীল আলোয় নেমে- শূন্য থেকে অন্য শূন্যে মিশে যেতে গিয়ে
মানুষটা পায়চারি ক’রে যায় এক ভিড় উঁচু পাথরের
অই পারে;- প্রতিটি পাথর যেন বাতাসের বেগের মতন
কোনও এক অনির্দিষ্ট পৃথিবীর- রয়েছে চিন্তায় স্তব্ধ হয়ে।

এ-সব পাথর খুব মৃত্যুহীন;- যদিও এদের ঠান্ডা নাসিকার নিচে
লালিত ছায়ার মতো মানুষেরা ম’রে যায়- অপরাধে
পৃথিবীর পথে উপনীত সব নব-নব যুগের আয়ুকে
দস্তানার নিচে- হাতে- কেটে নিয়ে অপরূপ উল্কির মতন
এই পাথরেরা উঠে হয়তো-বা কথা ক’বে দানবের মতো জেগে
আর-এক আঁধারে
যখন মানুষ সব শটিত বালির মতো উড়ে গেছে- আরও নিরাকুল
সময়ের ছিদ্র দিয়ে- অথচ প্রভাত দূরে বিজ্ঞাপন দিয়ে যায়
আবার প্রাণকে আমন্ত্রণ করে কারু-
কিন্নরের, কুকুরের, অ্যামিবা’র অথবা বৃক্ষের।

আমরা দু’জনে এসে মুখোমুখি দাঁড়ায়েছি- যেমন অনেক রাতে
আমাদের পরিচিত কোনও এক সাদা সারসের মতো মেঘ
সহসা ঘুমের থেকে জেগে উঠে চেয়ে দেখে নির্বাক পৃথিবী
তাহার পায়ের নিচে কেটে গেছে- তাহার নিজেরও কোনও অবলেপ নেই।