আজ এই পৃথিবীতে

আজ এই পৃথিবীতে কোনও মায়াবীর দীর্ঘ দুর্গ নাই
প্রান্তরের বুকের উপর দিয়ে সব-চেয়ে দ্রুত মোটরের পথ
এই বার মেরামত করিতেছে তারা
পাহাড়ের উঁচু-উঁচু পাইনগাছগুলো হয়তো স্লিপার হবে এক দিন
জানে তারা;- কঠিন গুলির আঘাত এসে লাগে বুকে
অগণন খরগোশ-জননীর মতো তারা নিদ্রালু বাতাস ছেড়ে
প্রতিরোধহীন মরণের সৌকুমাৰ্যে ঝরনার জলে খ’সে যায়
যেই ক’টা গাছ আজও পাহাড়ের অন্ধকার পীবর চূড়ায়
দাঁড়ায়ে রয়েছে- তাদের কপালে আর দেবতার
অভিজাত- নির্ধূম ভ্রূভঙ্গি নেই আজ
আকাশের ভ্রাম্যমাণ বৃহস্পতি-নক্ষত্রেরা বন্ধু নয়
আজ আর।
যেন এক চীনে চাপরাশি অনেক কেটোলে জ্বেলে
আকাশের পীঠ থেকে মশা’র মতন নক্ষত্রপুঞ্জেরে তাড়াতেছে
নিচে- এই পাইনগাছগুলো হৃৎকম্পনের অন্ধকারে এক বার
তরাসে ছেলের মতো ভূতুড়ে হাওয়ার দিকে চোখ তুলে দেখে যায়
নিভে যায় সব- গভীর সম্ভ্রম ছিল এইখানে এক দিন
মিলনের দিন- নক্ষত্রের রুপালি গোধিকাপুচ্ছ স্পর্শ ক’রে
পাইনের সুদীর্ঘ মাস্তুল যেন
আলোকমালার বন্দরে পৌছাত- অবশেষে- মধ্যনিশীথের
পাইনের সুঘ্রাণ সন্ধির নীড় থেকে এক দিন যেন সেই গ্রীক লেডা
বয়ঃসন্ধি-দীর্ঘ মুখে- আবেগে- ভয়ের ঘুণাক্ষরে-
ইঁদারার জলের মতন হিম- ন্যস্ত চোখে-
অপেক্ষা করিত জ্যোৎস্নায়
এ-পৃথিবী যত লেডা প্রসব করেছে রণকামানের ঔরসে শুয়ে
তারা সব নেমেছে অমোঘ- স্বর্গের রাজহাঁস উড়ু-উড়ু ডানা মেলে
তবু আর কোনও দিন উড়ে যাবে না ক’ যেন
মানবীর গাঢ়তর ধবল প্রণয়- মহৎ মেধাবী মাংস ছেড়ে
কয়েকটা গাছ আজ পাহাড়ের পীবর চূড়ায় প’ড়ে আছে
অন্ধকার বাদুড়ের মতো যেন সূর্যের কঠিন কর্নিশ থেকে ঝুলে

চারি-দিকে নেপালি করাতি
ইতস্তত এই সব কর্তিত তরুর তনিমার ক্লেদ- বেদনায় নয়-
কী যেন গভীর লজ্জায়- অপরাধে- প’ড়ে আছে
কৌমার্য-আহৃত অভিজাত বালিকার মতো
সাদা রক্ত কাপড়ের ঘ্রাণে মুখ ঢেকে- শব ঢেকে-
পাহাড়ের জঙ্ঘা কেটে এইখানে রেলপথ এই বার হতেছে উড্ডীন
এই সব প্রতিবাদ ক’রে তবু সনেট লিখিতে হবে:
কে বলে লিখিতে হবে?- কোনও মায়াবীর
দীর্ঘ দুর্গ থেকে আমি কোনও নির্দেশ পাই নাই

বরং চুরুট হাতে নিয়ে দেখা যাবে
এক সারি বগিগাড়ি পাহাড়ের পথ কেটে চলিতেছে
ঘাড়মোটা ত্রিশঙ্কু চেট্টি’র মেয়েদের মতো
বহু দিন যেই মাদ্রাজিরে দেখি নাই আমি
কিংবা তার মেয়েদের;- যদিও বিষয়ী লোক
কী যেন করুণা এক- নীরবতা ছিল তার মুখে
যখন সমুদ্র থেকে ঘনায়ে উঠিত ধীরে
কোনও এক পুরাণপুরুষ যেন সূর্যহীন বর্ধিষ্ণু উদ্রেকে
বেদনার পুরীষের মতো চ’লে যেত- নগরের বিষয়ের দিকে
সব মোম সৈকতের ‘পরে ফেলে রেখে
পিছে তার মোটা-মোটা নিস্তব্ধ মেয়েরা
নয় জন সারি-সারি- শামুকের মতো হেঁটে যেত
অনেক অতল ক্ষমা বুকে নিয়ে
সুপ্রজননের মাঠে- হেমন্তের বাষ্পকুয়াশায়।