আমাদের বুদ্ধি আজ

আমাদের বুদ্ধি আজ অন্তহীন মরুচর, তাই
প্রাণে শুধু বিষয়ের নিত্য দাহ আছে।
তার শান্তি সময়ের সাগরের কাছে
হয়তো-বা পাওয়া যেতে পারে;
কিন্তু কোন্ সময়ের দিকে যেতে হবে?
শূন্যের ভিতরে ফল যেখানে রয়েছে মনে হয়?
অথবা যে-দিকে গিয়ে হৃদয় ক্রমেই
শান্ত হ’য়ে টের পাবে শূন্য ছাড়া আর কিছু নেই?

তবুও সূচনা থেকে যাত্রা ক’রে কোনও প্রান্তে যাওয়া
ভালো; কোথাও চিহ্নের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে
বৃক্ষ নদী কুজ্ঝটিকা রক্তের আকাশ শতাব্দীর ভাঙা বাটখারা;
মূল্যনির্ণয়ের কাজে উঠছে পড়ছে-
ঘর বাড়ি সাঁকো নীড় ঘাস
ক্রেন এরিয়েল ট্রেন- গুনচট চালানির মাল
যে সাগর রোদে চলে- তবু কালো কুয়াশাকে আলো
মনে ভেবে অনাবিল ভাবে চলে
বেতার কম্পাস বাষ্প কলকব্জা হাল মাস্তুলের
হাড়গোড়ে বুক ভরে কর্মোৎসাহী ব্যাপারীর মতো
সোনা-রুপোর চলতি বাজারদর জানার ও জানবার বেগে,
চ’লে যায় অন্ধকার ভেদ ক’রে
অদ্ভুত আবছা মূর্তি বুকে টেনে নিয়ে
বদ্বীপ ও বন্দরের দিকে,
চেতনায় সেরকম চলা হ’ল ঢের।
দূর কাঁটা কম্পাসের দিকচিহ্ন আজ
ক্রমাগত শূন্যে বিলীন?

এক দিন যা-কিছু স্পষ্ট মনে হয়েছিল
সে-সব এখন আর স্থির
নির্ধারিত সত্য নয়;
আলো বেড়ে গেছে; আবছায়া আরও
বেড়ে গেছে;
আলো আরও বাড়লে ভয়াল পতঙ্গ সব ঘিরে রবে;
শত্রুদের দণ্ড আরও বেড়ে যাবে;
অনিশ্চিত বড়ো অন্ধকারে সব দেখা যাবে;
হয়তো আগুনে পরিণত হয়ে যাবে আলো।
হে হৃদয়, তবুও আঁধারদর্শী চেতনা-বলের দরকার।
দূর থেকে আরও দূরে যাত্রার প্রয়োজন আছে।
ভুল ছেড়ে অন্য এক শুদ্ধ কেন্দ্রে গিয়ে-
তাও ঠিক শুদ্ধ নয়- কি হবে দাঁড়িয়ে।
জন্মের আগে সেই কুজ্ঝটিকা ছিল,
মৃত্যুর পরে সেই অন্ধকার নিঃশব্দতা রবে,
সেই সব কিছু নয়;
জেনে মন চলেছে নতুন সূর্যে দিকনির্ণয়ে,
কিছু সূর্য- ঢের বেশি ছায়া দিয়ে হৃদয়কে ভ’রে
মধ্যবয়সী প্রৌঢ় অস্থির আত্মার বর্ণে-
বারবার সূর্য ভেঙে গ’ড়ে।

শতাব্দীর শত-কবিতা। বৈশাখ ১৩৬৯