চিরদিন শহরেই থাকি (সংযোজিত)

চিরদিন শহরেই থাকি
প’ড়ে থাকি পাটের আড়তে
করি কেরানির কাজ- শুভে-লাভে যদি কোনও মতে
দিন যায় চ’লে
আকাশের তলে
নক্ষত্রেরা কয় কোন্‌ কথা
জোৎস্নায় প্রাণের জড়তা
ব্যথা কেন পায়
সে-সব খবর নিয়ে কাজ কিবা হায়!

বিয়ে হয়েছিল কবে- ম’রে গেছে বউ
যদিও মহুয়া গাছে ফুটে ওঠে মউ
এক বার ঝ’রে গেলে তবু তারপর
মহুয়া মহুয়া তবু: কেরানির ঘর
কেরানির ঘর শুধু হায়
জীবনের গল্প শুধু হায়
জীবনের গল্প শুধু একবার আসে-
শুধু একবার নীল কুয়াশায়
নিঃশেষে ফুরায়।

দেবতা বুঝি না আমি
তীর্থ করি না ক’
তোমরা ঠাকুর নিয়ে থাকো।
তবু আমি এক বার ছুটি পেয়ে বেড়াবার তরে
গেলাম খানিকটা দূর- তারকেশ্বরে
গভীর অসাধ নিয়ে- গাঢ় অনিচ্ছায়
ট্রেনে আমি চড়িলাম হায়
কলরবে ধোঁয়ায় ধূলায়
সাধ ক’রে কে বা মিছে যায়!

জানি না ঈশ্বর কে বা- জানি শুধু ভূখা ভগবান
দিনগত পাপক্ষয় ক’রে পাব ত্রাণ
তার পর এক দিন নিমতলা ঘাটে
কিংবা কাশি মিত্রের তল্লাটে
পড়ে রব

তবুও যখন আমি ঢের রাতে ফিরিলাম ঘর
বুকে জাগে সেই দেশ: তারকেশ্বর।
দেবতারে কে খুঁজেছে- সারা-দিন ঘুরিয়াছি পথে
অবসন্ন ধুলোর জগতে
অসংখ্য ভিড়ের মাঝে আমি
একখানা মুখ দেখে গিয়েছি যে থামি
কবে যেন সিংহের মূর্তির কাছে তারে
দেখিয়াছি, এশিরিয়া বেবিলনে তাহারে ফেলেছি দেখে আমি
দেখেছি মিশরে
ঈসিসের ঘরে
সারাদিন- দিনমান আজ এই তারকেশ্বরে
আবার তাহার মুখ দেখিলাম, (আহা)
ধানসিড়ি নদীটির বিকেলবেলার মৌন জলে
বেতের ফলের মতো যেই চোখ, যেই রূপ
ধরা দেয় পৃথিবীর নীরব আঁচলে
দেখিলাম তাহা
আবার তাহার মুখ দেখিলাম, আহা।