মেধাবী আগুন

মেধাবী আগুন ক্রমে নিভে আসে- টের পাই- এই তার আলো:
আমাদের সকলের মুখে খেলা করে গোল এই জানালার কাছে
বাইরে শীতের রাত- যত দূর চোখ যায় সুদীর্ঘ থামের মতো গাছ
নিরেট থামের চেয়ে বেশি কিছু তবু; আকাশের মতন প্রান্তর
আকাশরেখায় প’ড়ে আছে;- শিশিরে সন্দিগ্ধ হয়ে দু’-একটা চিল
ইতর জন্তুর মতো কেঁদে উঠে ভুলে যায় কেঁদেছিল; জীবনের মানে চির-কাল
গিয়েছে নীরব হয়ে তাহাদের;- কোথাও বাতাবি-ফলে টের পাই; কোথাও ইঁদুর

সর-সর ক’রে সাদা ঘাসের ভিতর দিয়ে চ’লে যায় বিপদের দিকে
আমাদেরও প্রাণ সেই বিপদের পথে- নৃমুণ্ডে, মড়ার হাড়ে- লোষ্ট্রে, জলে;
ভূত ব’লে মনে হয় রজনীর নির্জন পাখিকে; ব্রহ্মাণ্ডের পরিধির মতো তার চোখ
আকীর্ণ গোলকধাঁধা নিয়ে একা ব’সে আছে শাল্মলী’র ডাল থেকে আমলকী-ডালে
সমস্ত আকাশ ছেপে; যা হয়েছে যা হতেছে অথবা যা হবে সেই সম্মিলিত সব
সময়ের অধিকারে এসে প’ড়ে আমরাও অপরূপ বিহঙ্গের মুখোমুখি।

এইখানে ঘরের ভিতরে- চুপে- আমরা কয়েকটি প্রাণ বেঁচে আছি আজও
ধূসর ঘড়ির মতো- বাহিরের বড়ো রৌদ্রে চণ্ড হয়ে সারা-দিন- শিশিরের রাতে
ধূসর ঘড়ির মতো তবু; সারা-দিন সকল মৃত্যুর সাথে যুক্ত হয়ে তবু
হৃদয়যন্ত্রের কাজ চলেছিল মিছেই হেঁয়ালি পেতে হিরন্ময় সময়কে
ফাঁকি দিতে চেয়ে; সময়ের হাতে তেল, তুলাদণ্ড, আমাদেরও বুকে স্প্রিঙ্
ম্লান দেয়ালের ‘পরে মাথা রেখে টের পাই।
কোথাও অন্যায় মৃত্যু নেই কোনও দিন।