মৃত্যুর দূত এল যেন

মৃত্যুর দূত এল যেন একটা সাদা সারসের মতো
স্থির শান্ত রাতের নক্ষত্রের থেকে চ’লে এল;
এল যখন সে নিচে নেমে
দেখা গেল ধূসর কাপড়ে দেহ জড়িয়ে আছে
মুখ তার করুণ- সুন্দর
এই মৃত্যুর দূত

আমাকে চাইলে আমি ধরা দিতাম তাকে।

কিন্তু এসেছিল সে অবিনাশ ঘোষালের কাছে।

সারা-দিন অফিসের কাজ ক’রে রাত দু’টোর সময় ঘোষাল তখনও ঘুমায় নি
সে তার জীবনে একে-একে তিনটি স্ত্রীকে পুড়িয়ে এসেছে
তেরোটি ছেলেপুলের পর সপ্তাহখানেক আগে তার চৌদ্দ নম্বরের শিশু
পৃথিবীর শোভা দেখবার জন্য নিজের পথ কেটে নেমে এসেছে
সেই রাতেই শেষ স্ত্রীকেও শ্মশানে রেখে এসেছে ঘোষাল
তেরোটি সন্তান বেঁচে থাকতেও আজ রাতে নতুন শিশুকে বাঁচাবার আয়োজনে
ঘোষাল ঈশ্বরের মতোই একা-

সোডা আর ব্রাশ দিয়ে ফীডিং-বোতলটাকে পরিষ্কার করা হয়ে গেছে
ঘ’ষে-ঘ’ষে ঘ’ষে-ঘ’ষে- তবুও আবার ঘ’ষে ঘ’ষে ঘ’ষে ঘ’ষে
গরম জল ফোটানো হয়ে গেছে
এই বার গ্ল্যাক্সো তৈরি করবে
শিশুটি ট্যাঁ-ট্যাঁ ক’রে হায়রান হয়ে গেল
ঘোষালের চারটি স্ত্রীর প্রেতাত্মারাও উপস্থিত ছিল না
তেরোটি সন্তান কেউ নাক ডাকাচ্ছে- কেউ…
কেউ-ই এ-ঘরে নেই

বোতলে ফুড ভ’রে
বোতলের, শিশুর গায়ের তাপ মিলিয়ে নিলো ঘোষাল
তার পর
গুনগুন ক’রে গান গাইতে-গাইতে
শিশুকে ফুড খাওয়াতে লাগল
ফুড খাওয়াতে লাগল
ফু-ড খা-ও-য়া-তে লা-গ-ল…

মৃত্যুর দূত সাদা সারসের মতো ডানা মেলে
(নক্ষত্রের দিকে উড়ে গেল আবার)
নীল আকাশে গা ভাসিয়ে দিল আবার
উড়ে গেল নক্ষত্রের দিকে
মৃত্যুকে বললে: ঘোষাল মরে নি
হো-হো ক’রে হেসে উঠল মৃত্যু
হি-হি ক’রে হেসে উঠল রুপালি নক্ষত্রের দল।

নীলাভ বাতাসের ভিতর তির্যক ডানা মেলে সাদা সারস একটা অদ্ভুত কৌতুক বোধ করতে লাগল
‘কিন্তু ঘোষাল যখন মরবে নরকে নিয়ে যাব তাকে? না, স্বর্গে?’
‘কোথাও না’, মৃত্যু বললে, ‘সে সময়ের বীজ নয়- মৃত্যু তার পিতা নয়।’