নারীসবিতা

আমরা যদি রাতের কপাট খুলে ফেলে এই পৃথিবীর নীল সাগরের বারে
প্রেমের শরীর চিনে নিতাম চারি দিকের রোদের হাহাকারে,-
হাওয়ায় তুমি ভেসে যেতে দখিন দিকে- যেইখানেতে যমের দুয়ার আছে;
অভিচারী বাতাসে বুক লবণ- বিলুণ্ঠিত হলে আবার আমার কাছে
উতরে এসে জানিয়ে দিতে পাখিদেরও- সাদা পাখিদেরও স্খলন আছে।
আমরা যদি রাতের কপাট খুলে দিতাম নীল সাগরের দিকে,
বিষণ্নতার মুখের কারুকার্যে বেলা হারিয়ে যেত জ্যোতির মোজেয়িকে।

দিনের উজান রোদের ঢলে যতটা দূর আকাশ দেখা যায়
তোমার পালক সাদা আরও সাদা হয়ে অমেয় নীলিমায়
ঐ পৃথিবীর শাটিনপরা দীর্ঘগড়ন নারীর মতো- তবুও তো এক পাখি;
সকল অলাত ইতিহাসের হৃদয় ভেঙে বৃহৎ সবিতা কি!
যা হয়েছে যা হতাছে সকল পরখ এইবারেতে নীল সাগরের নীড়ে
গুঁড়িয়ে সূর্য নারী হ’ল, অকূলপাথার পাখির শরীরে।

গভীর রৌদ্রে সীমান্তের এই ঢেউ- অতিবেল সাগর, নারি, সাদা
হতে-হতে নীলাভ হয়;- প্রেমের বিসার, মহিয়সী, ঠিক এ-রকম আধা
নীলের মতো, জ্যোতির মতো। মানব ইতিহাসের আধেক নিয়ন্ত্রিত পথে
আমরা বিজোড়; তাই তো দুধের-বরণ-সাদা পাখির জগতে
অন্ধকারের কপাট খুলে শুকতারাকে চোখে দেখার চেয়ে
উড়ে গেছি সৌরকরের সিঁড়ির বহিরাশ্রয়িতা পেয়ে।

অনেক নিমেষ অই পৃথিবীর কাঁটা গোলাপ শিশিরকণা মৃতের কথা ভেবে
তবু আরও অনন্তকাল ব’সে থাকা যেত;- তবু সময় কি তা দেবে।
সময় শুধু বালির ঘড়ি সচল ক’রে বেবিলনের দুপুরবেলার পরে
হৃদয় নিয়ে শিপ্রা নদীর বিকেলবেলা হিরণ সূর্যকরে
খেলা ক’রে না ফুরোতেই কলকাতা রোম বৃহৎ নতুন নামের বিনিপাতে
উড়ে যেতে বলে আমার তোমার প্রাণের নীল সাগরের সাথে।

না হলে এই পৃথিবীতে আলোর মুখে অপেক্ষাতুর ব’সে থাকা যেত
পাতা ঝরার দিকে চেয়ে অগণ্য দিন,- কীটে মৃণালকাঁটায় অনিকেত
সাদা রঙের সরোজিনীর মুখের দিকে চেয়ে,
কী এক গভীর ব’সে থাকায় বিষণ্ণতার কিরণে ক্ষয় পেয়ে,
নারী, তোমার ভাবা যেত।- বেবিলনে নিভে নতুন কলকাতাতে কবে
ক্রান্তি, সাগর, সূর্য জ্বলে অনাথ ইতিহাসের কলরবে।