অন্তরঙ্গ স্বপ্নের গাম্ভীর্যে

কোনও কবি অন্তরঙ্গ স্বপ্নের গাম্ভীর্যে
মগ্ন হয়ে চেয়ে থাকে গ্রন্থের দিকে
তবুও একটি পাতা অধীত হবার আগে
জলের জটের মতো পৃথিবীর প্রবীণ জ্ঞানীকে
ছেড়ে দেয় পুস্তকের
অমায়িক ঘোষণার বিম্বের ভিতর
নিজে সে জীবন, মৃত্যু রচনা করেছে তার পর
চাঁদকে সূর্যকে আর নক্ষত্রকে ডেকে-ডেকে জ্যোতিষ্কপথের।

পাখির তির্যক ভঙ্গি দেখা যায়
উড়ে বসে নৌকার মাস্তুলে
যেন সূর্য এক হাতে সমুদ্রকে
এক হাতে পক্ষীকে নিখিলের মূলে
ছুঁড়ে দিয়ে করেছে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ
প্রকম্পিত তুলাদণ্ড- আমাদের চেয়ে ঢের গভীর- গভীর
এই সব কল্পনার আয়োজনে মানুষের মুগ্ধ শরীর
ভাঁড় সাজে- তবুও করেছে সংগঠন

অনেক গম্ভীর ভাষ্য বিদূষক
আমরাও মৃত্যু চাঁদ সূর্যকে করেছি রচনা
পৃথিবীর স্তিমিত- স্তিমিত আরও তাপের ভিতরে ক্রমে
অনেক প্রগলভ কথা ব’লে যাবে খনা
যত দিন জিহ্বা আছে
যত দিন জিহ্বা আছে মুণ্ডের ভিতর
হে জীবন, মৃত্যু, সূর্য, অনুসূর্য, নক্ষত্রনিকর,
চ’লে এসো আমাদের মৃত্তিকার কাছে

বিবর্ণ পাথর কেটে ল্যাম্পের আবরণী
জাতিস্মর গাছ কেটে টেবিলের কাঠ
অনেক পুরোনো গ্রন্থ, নতুন মানুষ
আকাশের অগ্নিপিণ্ড নিয়ে আমি ভাঁড়সম্রাট
মোম, কাগজের মতো হয়ে যায় সন্ধি মাস
তরবার: কয়েকটি চাখড়ির কাঠি
সত্তা তবু এই সব নিয়ে পরিপাটি
অন্ধকারে জলচুম্বনের মতো করে বিষয়কে গ্রাস।

অনেক নতুন সূত্র- পুরানো মানুষ
কবিদের রূপকের তির্যক আঙুল
আমারে এনেছে টেনে অন্য এক অহঙ্কার থেকে
যেমন জননী ক্ষিপ্র বালকের চুল
টেনে নেয় ক্ষিপ্রতর প্রতিভায়। যেমন মহিলা
মায়াবীর দড়ি বেয়ে অতিক্রান্ত হয়ে তবু প্রেমিকের কাছে
সমসাময়িক তর্ক, জীবিকার খাদ্য হয়ে আছে
মতান্তর হলে হংসী হয়ে যেত ক্রূর হাড়গিলা।

এরা সব- আজই তবু- অপূর্ব আক্রোশে
পৃথিবীতে জেগে আছে নিমিত্তের মতো
এখন গিয়েছে সূর্য অস্তমিত হয়ে
পিতলের পিলসুজে মূঢ়তাবশত
তবুও রয়েছে বেঁচে আগুনের খুর
প্রবীণ মনীষী- সে-ও মাথায় গাধা’র টুপি এঁটে
স্তিমিত ভূতের সাথে চলিতেছে হেঁটে
রাজমুণ্ড-অঙ্কিত মুদ্রায় ঘুরিতেছে বিধৃত গরুর

আজ তবু রক্তে আমি পেয়েছি যে-বীজ
ক্রমে-ক্রমে-স্খলিত দেহের মৃত্যু হলে
সমুদ্রের পারে সেই কঠিন কৌটিল্য-মুণ্ড
কী কথা- আবার কোন্ কথা যাবে ব’লে
কী কথা- আবার কোন্ কথা
প্রসিদ্ধ পঞ্চম অঙ্ক মুড়ে গেলে বাতাসের শীতে
হয়তো দেখিবে চেয়ে ক্ষিপ্র আরশিতে
আবার আগুন পেল পাদপ্রদীপের সচ্ছলতা।